স্টাফ রিপোর্টার
প্রতিনিয়ত অবহেলা, বৈষম্য, সামাজিক প্রতিবন্ধকতাসহ নানা ধরনের অধিকার বঞ্চিত ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষের না পাওয়ার হাহাকার, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বসবাস এ যেন তাদের নিত্য দিনের চিত্র।
১৪ মে মঙ্গলবার সকালে সিরডাপ অডিটোরিয়ামে ঋষি সম্প্রদায়ের অধিকার ও টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে পলিসি অ্যাডভোকেসি রোডম্যাপ সুপারিশ শীর্ষক জাতীয় গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইউএসএইড এর অর্থায়নে কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরী সহায়তায় ঋষি সম্প্রদায়ের অধিকার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থা (জিবিএসএস) এ গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করেন।
গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ খায়রুল আলম সেখ, কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনালের চীফ অব পার্টি ক্যাটি ক্রোক, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ এর সভাপতি ও বিশিষ্ট নজরুল গবেষক মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান যুব ঐক্য পরিষদ এর সাধারন সম্পাদক ব্যারিষ্টার তাপস কান্তি বল।
সংগঠন এর সভাপতি প্রফেসর সাজেদা বানুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠন এর সাধারন সম্পাদক, মাসুদা ফারুক রত্না। গোলটেবিল বৈঠকে সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কাপ এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সানইয়াত,বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সাবেক সভাপতি মোস্তফা আলমগীর রতন,বাংলাদেশ গার্হস্থ্য শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মুর্শেদা আখতার প্রমুখ।
বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঋষি সম্প্রদায় একটি এবং এই সম্প্রদায়টি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে নিপিড়ন ও শোষনের স্বীকার হয়ে আসছে।ঢাকা শহর এবং তার আশেপাশের ২৬টি এলাকায় প্রায় তিনলাখ ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস,যাদের অধিকাংশই দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। জন্মপরিচয়ের কারণে তাদের বেশির ভাগই আদি পেশাজুতা তৈরি বা জুতা সেলাইয়ের সাথে জড়িত।এই সম্প্রদায়ের মানুষ বলা যায় তাদের মৌলিক অধিকার বিশেষত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সুপেয় পানি এবং নিরাপদ আবাসন, কর্মসংস্থান, বিভিন্নভাতা ইত্যাদির মতো পরিসেবাগুলো থেকে বঞ্চিত বা অবহেলিত। ন্যায়বিচারের দাবি করার মত দক্ষতা এবং জ্ঞানের অভাবে তারা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য ও অবহেলার শিকার হচ্ছে। বছরের পর বছর রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীরা সংখ্যালঘু কমিশনের মতো আইন এবং প্লাটফর্মের মাধ্যমে ঋষি সম্প্রদায়ের অধিকার ও উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ অবধি নীতি নির্ধারকরা সেইসব প্রতিশ্রুতির কোনোটিই কার্যকর অর্থে বাস্তবায়ন করেননি।
তাই জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আত্মকর্মসংস্থান প্রভৃতি বিষয়ে ঋষিসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ প্রণয়ন প্রয়োজন।এ গোলটেবিল আলোচনায় ঋষি সম্প্রদায়ের অ্যাডভোকেসী ফোরামের সদস্য কনকা দাস ও প্রসেনজিত দাস ৫টি রোডম্যাপ সুপারিশ উপস্থাপন করেন।জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা এবং ঋষিদের অধিকারকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সংখ্যালঘুদের বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা ,সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যাতে তাদের সংগঠিত ও সক্রিয় করা যায়,সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তামূলক কর্মকান্ডে ঋষি সম্প্রদায়ের জন্য অধিক অংশগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা,বিগত মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত বৈষম্য বিরোধী আইন দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। বেসরকারী খাতে ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির জন্য বিদ্যমান আইন বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনে নতুন আইন তৈরি ও কার্যকর করা। প্রধান অতিথি ডাঃ দীপু মনি বলেন সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের সমান অধিকার প্রদানে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে উন্নয়ন কাজ করছে। বাংলাদেশের সকল মানুষের মতই ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষও সকল সুযোগ সুবিধার অধিকার পাবে।তাদের সন্তানেরা যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবে।যোগ্যতা অনুসারে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে।তিনি বলেন যে সুপারিশগুলো প্রস্তাবনা করা হয়েছে তা বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে যেমন ছিল তেমনি ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে একটি জাতীয় পর্যায়ে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, নতুন করে বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা অব্যহত ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং অর্থ ও বাসস্থানের সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি ছিল যা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন তালিকার কর্মসূচিতেও আছে।
সমাজ সেবা মন্ত্রণালয়সহ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রান্তিক মানুষের জন্য বিশেষ বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন করছে, সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। সেই সাথে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি ও অন্যান্য কমিটিতে এ বিষয়ে ককাস গঠনের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হরে। কেননা সবকার উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে কাজ করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার প্রত্যয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। তাই উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।উন্নয়নের মূলধারায় ঋষি, প্রান্তিক, খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই অর্থনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধি অর্জন করা প্রায় অসম্ভব। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে আমার পক্ষ থেকে যতটুকু করার আমি তা করবো।ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে দক্ষ করে তুলতে হবে, তারা যেন পর্যাপ্ত শিক্ষা পায়, চাকরি করে, ব্যবসা করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনে নীতিমালার সংশোধন ও সংযোজন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন এডাব পরিচালক এ.কে.এম.জসিম উদ্দিন।