নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিগত ২০০৩ সালে নিজের আপন বড় বোন ও বোন জামাইকে হত্যা করে ডাবল মার্ডার দিয়ে শুরু হয় তাওলাদের অপরাধমূলক কর্মকান্ড। এরপর থেকে একের পর এক বিভিন্ন অপরাধের জড়িয়ে পড়ে সে। তার বিরুদ্ধে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য তাওলাদকে স্থানীয়রা এক নামেই চেনে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে। ইতোমধ্যে জানা গেছে বিভিন্ন থানা ও কোর্টে তাওলাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৮টি মামলা। তবে এসব মামলায় জমিনে বেড় হয়েও পুনরায় আবার তার অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসীরা। তাই তার অত্যাচার থেকে মুক্তি চাইছেন মাছিমপুর এলাকার ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার লালাটি এলাকায় তাওলাদের পৈত্রিক বাড়ী হলেও বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাছিমপুর দেওয়ান বাড়ি এলাকার শ্বশুরবাড়ীতে ঘরজামাই হিসেবে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই পরিচালনা করছেন অপরাধমূলক কর্মকান্ড। জানা যায়, ২০০৩ সালে সন্ত্রাস তাওলাদ তার আপন বড় বোন রেহানা বেগম ও বোন জামাই নূরা মিয়াকে হত্যা করে। এ জোড়া খুনের দায়ে তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়। পরে সে পালিয়ে এসে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মাছিমপুর এলাকায় আত্মগোপন করে। আত্মগোপনে থাকাবস্থায় মাছিমপুর দেওয়ান বাড়ি এলাকার মৃত আব্দুল জলিল মিয়ার ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করে বসবাস করে। পরে মাছিমপুর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাস গড ফাদার শওকত বাহিনীতে যোগ দেন এই তাওলাদ। এবং বর্তমানে তিনি গড়ে তোলেন ২ শতাধিক সদস্যের কিশোরগ্যাং, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজি, চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মে সন্ত্রাসী বাহিনী। তার বাহিনীতে প্রায় ২ শতাধিক সন্ত্রাসীর সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এই বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে এলাকার উঠতি বয়সী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য। নিরীহ মানুষের জমি দখল করাসহ এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে চাঁদাবাজীসহ মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ অপকর্মের ব্যাপারে কেউ মুখ খুললেই তার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন।
সন্ত্রাসীদের গড ফাদার তাওলাদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় খুন, ধর্ষণ, অস্ত্র, বিস্ফোরক, মারামারি, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ইয়াবা সেবন ও পাচারসহ নানা অপরাধের ১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রূপগঞ্জ থানায় ২০১৯ সালের ৪২ নম্বর মামলা, ২০১৮ সালে ৩৪ নম্বর মামলা, ২০১৫ সালে ১৬, ২৫, ২৮ ও ৪০ নম্বর মামলা, ২০১৪ সালে ৫২ ও ৭৫ নম্বর মামলা, ২০১৩ সালে ২৬ ও ৫১ নম্বর মামলা, ২০১২ সালে ২, ৪, ৯, ১৬ ও ২০০ নম্বর মামলা, ২০১১ সালে ০৪ নম্বর মামলা, সোনারগাঁ থানায় ২০১৩ সালে ২৯ নম্বর মামলা ও বন্দর থানায় ২০০৩ সালে ৩৪ নম্বর মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগীরা। তার মধ্যে বোন রেহানা বেগম ও বোন জামাই নূরা, জালাল, সুুমন ও বাবুসহ ৫টি হত্যা মামলা, ৩টি ধর্ষণ ও ৩ টি অস্ত্র মামলা রয়েছে।
এই সন্ত্রাস বাহিনীর গড-ফাদার তাওলাদের বিরুদ্ধে মাছিমপুর এলাকার স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হত্যা, ধর্ষণ, মাদক, অস্ত্রসহ ১৮ মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে এলাকায় পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সন্ত্রাস বাহিনীর লিডার তাওলাদ হোসেন। এমনকি সে তার নিজের আপন বড় বোন ও বোন জামাইকে হত্যা করে রূপগঞ্জে এসে সবাকে সন্ত্রাসী দলের লিডার শওকতের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন অপকর্মে অব্যাহত রাখে। পরে সন্ত্রাসী শওকতকে র্যাবের ক্রস ফায়ারে মৃত্যুর পর তার বাহিনীর প্রধান হয় তাওলাদ হোসেন। এর পরে থেকে ভয়ংকর রূপে আভির্ভূত হয়ে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তাওলাদ। এমনকি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাকে গ্রেপ্তার করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপের দাবি জানান স্থানীয়রা এলাকাবাসী ও সাধারণ জনগণ।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ (গ) সার্কেল এএসপি হাবিবুর রহমান জানান, তাওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় ও কোর্টে একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি সব মামলায় জামিনে আছেন, তবে আরেকটি বিষয় তিনি জামিনে বের হয়ে যদি মাদক কারবার, কিশোর গ্যাং কালচার ও চাঁদাবাজিসহ কোন ফৌজদারি অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হয় তাহলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।