মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরা আশাশুনিতে মাটির পুকুরে লাখ লাখ গলদা চিংড়ি পিএল উৎপাদনে মিলেছে অভাবনীয় সাফল্য। আশাশুনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাপড়ায় ৭০ শতকের একটি পুকুরে ৩২৬টি গলদা চিংড়ির মাদার থেকে প্রায় ১০ লক্ষাধিক পিএল উৎপাদিত হয়েছে। এতে খামারিদের পাশাপাশি চাষিরাও দ্বিগুণ লাভের মুখ দেখতে পাবেন বলে ধারণা করছেন মৎস্য অধিদপ্তর।
দেশে যে পরিমাণ গলদা চিংড়ি চাষ হয় তার শতকরা ৯৫ শতাংশ পিএল চোরাচালানোর মাধ্যমে ভারত থেকে আনা অথবা অবৈধভাবে নদী থেকে রেণু সংগ্রহ করা। হ্যাচারীগুলোতে উৎপাদিত পিএল চাহিদার পাঁচ শতাংশ পূরণ করতে পারে না। যে কারণে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের মতো বাংলাদেশেও উপকূলীয় অঞ্চলে মাটির পুকুরে গলদা চিংড়ির পিএল উৎপাদনের। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর সেই সাফল্য ধরা দিয়েছে সাতক্ষীরায়।
কালীগঞ্জ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদার সরাসরি তত্ত্বাবধানে আশাশুনি উপজেলার চাপড়ার এইচ এম জামানের পুকুরে সফলভাবে গলদা চিংড়ির পিএল উৎপাদন সম্পন্ন হয়েছে।
মৎস্য অফিস জানায়, পিরোজপুরের কচা নদী থেকে মাদার সংগ্রহ করে ৩২৬টি বাছাই করা মাদার এইচ এম জামান এর মৎস্য খামারের ৭০ শতক জমির একটি পুকুরে ছাড়া হয়। গলদা চিংড়ির মাদারগুলোর ওজন ছিল ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম। সেমিইনটেনসিভ বাগদা চিংড়ি চাষের পুকুরের মতো করে বায়োসিকিউরিটি ও পুকুর প্রস্তুতি নিশ্চিত করা হয়েছে। পানির স্যালাইনিটি ১২ থেকে ৮পিপিটি পর্যন্ত ওঠানামা করানো হয়েছে। সব খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে দুই লাখ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, এই পুকুরে ১০ লক্ষাধিক পিএল উৎপাদিত হয়েছে যার বাজার মূল্য ২৫ লাখ টাকার মতো। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক রেনু বিক্রি করা হয়েছে।
যশোর জেলার কেশবপুর থানার নওয়াপাড়া গ্রামের মোশাররফ হোসেন বলেন, আগে আমরা নদীর এবং ভারত থেকে আসা পিএল উচ্চ মূল্যে সংগ্রহ করতাম। হঠাৎ খবর পেলাম আশাশুনি উপজেলার জামানের খামারে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে মাটির পুকুরে গলদা পিএল উৎপাদন হয়েছে। তাই এখানে এসেছি পিএল নেওয়ার জন্য। পিএল (পোনা) দেখেই মনে হচ্ছে এগুলো অনেক ভালো হবে। পিএল’র গ্রোথ অনেক ভালো। দামও কম।
পিএল ক্রয় করতে আসা কবির হোসেন জানান, হ্যাচারীর পিএল ঘেরে ছাড়লে অনেক সময় মাটির স্পর্শ পেলেই মারা যায়। এছাড়া ভারত থেকে আসা পিএলও ভালো হয় না। এখানের পিএলগুলোর গ্রোথ দেখেই মনে হচ্ছে অনেক ভালো হবে। তাই আমরা নিজেরাও নিয়েছি। আবার অন্যত্র বিক্রয়ের চিন্তাও করছি।
বুধহাটা ইউনিয়নের খামারী গোলাম মোস্তফা বলেন, এতদিন আমরা নদী থেকে সংগৃহিত গলদা রেনু ক্রয় করে খামারে ছাড়তাম। অনেক সময় ভারতে চোরাই পথে আসা রেনুও ছেড়েছি। এতে আমাদের লস হতো। তবে আশাশুনিতে প্রাকৃতিক পরিবেশে গলদার পিএল উৎপাদনের খবর পেয়ে এখানে এসেছি। পিএল দেখে মনে হচ্ছে চাষীদের লাভ হবে।
খামারের সত্বাধিকারী এইচ এম জামান বলেন, কালিগঞ্জ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদার পরামর্শে এখানে ৭০শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে মাদার ছেড়েছি। পরীক্ষায় আমরা সফল হয়েছি। যে পরিমাণ পিএল (পোনা) উৎপাদন হয়েছে। তা আশে পাশের এলাকার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলেও পৌছে দেওয়া সম্ভব হবে।
কালিগঞ্জ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, গলদা রেনুর চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় ঘাটতি থেকেই যায়। ঘাটতি পূরণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছি। এর প্রেক্ষিতে খামারী জামানের ৭০ শতক পুকুরে পরীক্ষামূলকভাবে ফিরোজ পুরের কচা নদী থেকে মাদার সংগ্রহ করে পিএল উৎপাদনের চেষ্টা করি। অনেক কম খরচে আমাদের চেষ্টাটি সফল হয়েছে। আমরা মনে করি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন এসব পিএল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দিতে পারলে চাষিরা লাভবান হবে খামারীরাও আশার আলো দেখবেন। উভয়ের খরচ কমবে। পাশাপাশি চাহিদাও পূরণ হবে।