মোঃনাজমুল মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারীতে ভারী হয়ে উঠেছে চারদিক।বর্তমানে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, নিরাপদ পানি,বাসস্থান, ও চিকিৎসা সেবার ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।ফলে হাজার হাজার মানুষের জীবন-যাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।২৬ মে এ উপকূলীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় 'রেমালে'এখানকার মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।নদীর তীরবর্তী ৬টি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।এছাড়াও মানুষের বসতবাড়ি, সহায়-সম্পত্তি,মাছের ঘের,পুকুর,ফসলি জমি,বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় কয়েক হাজারের বেশি হত দরিদ্র পরিবার।ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল' দীর্ঘ ৪২ ঘন্টা আঘাত হানার ফলে এবং তীব্র জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার পানগুছি নদীরপাড় সংলগ্ন সন্যাসী থেকে ঘষিয়াখালীর প্রায় ১২০ কিলোমিটার এলাকার কাঁচা পাকা রাস্তা ভেঙে গিয়ে ২০ টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।এবং নস্ট হয়ে গেছে কয়েক হাজার মাছের ঘের, পুকুর, দোকানপাট, ভেঙে পড়ে অসংখ্য গাছপালা, মারা গেছে কয়েক হাজার গবাদিপশু। কিন্তু মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এখনও সরকারের প্রয়োজনীয় তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না এ অঞ্চলে।দিনের পর দিন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হতে নিজেদের অস্থিত্ব বিলিন হওয়ার পথে এই অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের জনজীবন। বাংলাদেশের সর্বত্র উন্নয়ন হলেও আজও অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষ।স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ তৎপরতা বৃদ্ধি ও টেকসই বেড়িবাঁধের জোর দাবি জানাচ্ছে এসব অঞ্চলের কয়েকলাখ ভুক্তভোগী জনসাধারণ।তাদের দাবী উপকূলীয় মানুষের মৌলিক অধিকার পুরণে ব্যার্থ রাষ্ট্র,৫০ বছরেও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।এদিকে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রচন্ড আঘাতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ ১টি পৌরসভায় প্রত্যন্ত গ্রামের সড়কের কার্পেটিং ও কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নদীর তীরবর্তী ৬টি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা।এর মধ্যে বারইখালী ফেরিঘাট থেকে বহরবুনিয়া অভিমূখী ১০ কিলোমিটারের কার্পেটিং, এসবিবি ও কাঁচা রাস্তাটি ৮০ ভাগ ভেঙে গিয়ে বিভিন্ন স্পটের ১৫/২০টি স্থানে অনেক যায়গাজুড়ে বড় বড় খানাখন্দে পরিনত হয়েছে। রাস্তার ইট ভাসিয়ে নিয়েছে নদীতে। এতে বারইখালী, সুতালড়ী, কাশ্মির তুলাতলা, বহরবুনিয়া, ফুলহাতা ও ঘষিয়াখালীসহ ৬টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চলাচলে দুভোর্গ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের সহযোগীতায় বড় বড় খানাগুলোতে বাঁশ ও শুপারী গাছ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে চলাচল করতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। এ রাস্তা থেকে চলাচলে ভুক্তভোগী বারইখালী গ্রামের একাধিক বেক্তিরা জানান, বন্যার ৫ দিন পার হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ন এ রাস্তাটি ১৫/২০ যায়গা থেকে ভেঙে মানুষের চলাচলে খুবই কষ্ট হচ্ছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা রাস্তা পাড় হতে দূভোর্গের আর সীমা নেই।
অপরদিকে, এ উপজেলার হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের পাঠামারা, বদনীভাঙা ও সানকীভাংগা গ্রামের কাঁচা-পাকা ৮/১০টি রাস্তা ভেঙে পড়েছে। খাউলিয়া ইউনিয়নের খাউলিয়া, চালিতাবুনিয়া, সন্যাসী, পশুরবুনিয়া, ফাঁসিয়াতলা ও পূর্ব বরিশাল গ্রামের ৬/৭টি ইটসোলিং ও কাঁচা রাস্তা ও খাউলিয়া বাজার সংলগ্ন বড় কাঠের পুলটি ভেঙে গিয়ে দুর্ভোগে ওই এলাকার মানুষ। মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কাঠালতলা-গাবতলা কার্পেটিং সংযোগ সড়কটি একাংশ ভেঙে গিয়ে বড় খাদে পরিনত হয়েছে। বলইবুনিয়ার শ্রেণিখালীর ৩, শ মিটার অস্থায়ী বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে নদী গর্ভে বিলীন। পঞ্চকরণের দেবরাজে ৮শ’ মিটার ওয়াবদা বেড়িবাঁধ বিভিন্ন স্থান থেকে ভেঙে পড়েছে। উপজেলার যাদের একমাত্র আয়ের উৎস মৎস ঘের তাদের সেই ঘেরের চিহ্ন পর্যন্ত নেই, পথে বসে গেছে ঘের ব্যাবসায়ীরা।
এছাড়াও চিংড়াখালী, খাউলিয়া, বহরবুনিয়া ও হোগলাবুনিয়ার ৭/৮টি ব্রিজের (এ্যাপ্রোজ) সংযোগ সড়ক ভেঙে পড়েছে। ১২টি কাঠের পুল ও আয়রণ ব্রিজ ভেঙে গেছে। ৪/৫টি কাঠের পুল পানির স্রোতে ভাসিয়ে নিয়েছে।এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১২০ কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা, ২৭০ কিলোমিটার এসবিবি পাকা রাস্তা, ৭/৮টি ব্রিজের এ্যাপ্রোজ, ১২টি পুল ও আয়রণ ব্রিজ বিধস্ত হয়ে ১৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, রিমালের আঘাতে এবারে গ্রামীণ অবকাঠামো রাস্তাঘাট ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রথমিক তথ্য বিবরনী তাদের সেন্টার সফটাওয়ারে এ্যাসেসমেন্ট তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ছোটখাটো আকারে আকারে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাস্তাগুলো মেবাইল মেইনটেনেন্স এমারজেন্সি কর্মীদের মাধ্যমে শীগ্রই মেরামত করে জনচলাচল সুগাম করা হবে। বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোতে কাজ করতে সময় লাগবে। এ দূযোর্গে উপজেলার গ্রমীন অবকাঠামো ভেঙে গিয়ে প্রায় ১৪০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা এ কর্মকর্তা। এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস, এম তারেক সুলতান বলেন, রিমালে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন পর্যায়ের রাস্তা ঘাটগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করে জনচলাচল উপযোগী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক মহদয়ের দপ্তরে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির একটি তথ্য বিবরণী প্রেরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের এলজিইডি দপ্তরের উর্ধ্বতণ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করারও কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।