মো লুৎফুর রহমান রাকিব
ফের ২০২৪ সালে সর্বভারতীয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৭২০ নাম্বরের মধ্যে ৭২০ পেয়েই প্রথম স্থান অধিকার করেছেন মুম্বাইয়ের মুসলিম হিজাবী মেয়ে আমিনা আরিফ কাদিওয়ালা।
আমিনা আরিফ পড়াশোনা করেছেন মুম্বাইয়ের এক উর্দু মিডিয়াম স্কুল থেকে। তিনি হিজাবধারী একজন মুসলিম তরুণী। হিজাব তার শিক্ষার অগ্রগতিতে বাধা হতে পারেনি। তিনি হিজাব পরেই সাফল্য ছিনিয়ে নিয়েছেন দেশের প্রায় ২৫ লাখ তরুণ-তরুণীদের মাঝে।
উর্দু মিডিয়ামের ছাত্রী আমিনার এই সাফল্য সহজে ধরা দেয়নি। এর পেছনে রয়েছে অনেক না বলা পরিশ্রম, অধ্যবসায়, না ঘুমানো রাত। সবথেকে বেশি বাধা ছিল ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ার। উর্দু মিডিয়াম হওয়ার কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে। তবে দমে যাননি আমিনা। আমিনা তার এই সাফল্যের সিংহভাগ কৃতিত্ব দিয়েছেন নিজের বেকারী শ্রমিক পিতা,মা, ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে। যারা প্রতিটা মুহূর্তে আমিনাকে সহায়তা ও উত্তম শিক্ষাদান করেছেন।
সেই ছোট্ট থেকেই ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা ছিল আমিনার। দশম শ্রেণি পর্যন্ত উর্দু বিভাগেই পড়াশোনা করেছেন। তারপর এসভিকেএমের মিথিবাই কলেজে ভর্তি হন। প্রথম থেকে ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ার কারণে নিটের পড়াশোনায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে নিজের ‘ড্র-ব্যাকস’গুলো কাটিয়ে ওঠেন তিনি।
২০২৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের ১ লাখ ২০ হাজার ৭০ জন প্রার্থী সর্বভারতীয় মেডিকেল প্রবেশিকার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। পরীক্ষা দিয়েছিলেন ১ লাখ ১৬ হাজার ১১০ জন। আর ৬৩ হাজার ১৩৫ জন কোয়ালিফাই করেছেন, যা শতাংশের বিচারে ৫৪।
এ পরীক্ষায় মোট ৬৭ জন একই নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। আর তাদের মধ্যে আমিনাও একজন। ৭২০ নম্বরের মধ্যে ৭২০ নম্বরই পেয়েছেন তিনি।
আমিনা সামান্য একজন বেকারি শ্রমিকের মেয়ে। ছোট থেকেই পড়াশোনায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। দশম শ্রেণিতে ৯৩.২০ শতাংশ অন্যদিকে, দ্বাদশ পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশ স্কোর করেছিলেন। আমিনার ইচ্ছা, দিল্লির এইমস থেকে মেডিকেল পড়াশোনা করা। তবে অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
নিটে প্রথম হওয়ার পর আমিনা সংবাদমাধ্যমকে বলেন,
– “মন দিয়ে নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। প্রতিদিন রুটিন করে পড়াশোনা করেছি। শিক্ষকরা যেভাবে গাইড করেছেন, সেভাবেই পড়েছি। তবে বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতির থেকে নিটের প্রস্তুতির উপর আমার জোর বেশি ছিল।”
বাংলাদেশের মতো ভারতে কোটা ব্যবস্থা নেই। নেই মোটেই সংখ্যালঘু হবার কারণে কোনো ক্ষেত্রেই বিন্দুমাত্র সহানুভূতি।বরং মুসলিমদের জন্যে চাকরি মানেই সোনার হরিণ। তবু সংগ্রাম থেমে নেই।মূল্যায়ন না থাকলেও প্রতিবছরই শিক্ষায় মুসলমানরা এক একটি রেকর্ড করে যাচ্ছেন।
বিদ্যাকে কেউই কেড়ে নিতে পারেনা,সেটা কেবল একান্তই নিজের। বোন আমিনার ভবিষ্যতস্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক,এটাই কামনা করি।