জামাল উদ্দীন -কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে জমিজমার পূর্ব বিরোধের জের ধরে রেজাউল করিম (৩০) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকালে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ রাস্তার মাথা বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি।
নিহত রেজাউল করিম (৩০) টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ড শাহপরীরদ্বীপ মিস্ত্রিপাড়া বাসিন্দা মৃত হামিদ হোসেনের ছেলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের মামা মোহাম্মদ আয়াছ বলেন, জমি নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে। সকালে আদালতে মামলায় হাজিরা দিতে কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দ্যেশে শাহ এমরান, নুর করিম, রেজাউল করিম ও তিনিসহ চারজন একটি অটোরিকশা (সিএনজি) যোগে রওনা হন। এক পর্যায়ে তাদের বহনকারি গাড়ীটি শাহপরীর দ্বীপ তিন রাস্তার মাথা নামক এলাকায় পৌঁছে। এসময় উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ফরহাদের নেতৃত্বে কয়েকজন দা, লম্বা কিরিচ ও লোহার রড নিয়ে অটোরিকশাটি গতিরোধ করে ।
এই পরিস্থিতিতে প্রাণ রক্ষার্থে রেজাউল করিমসহ চারজন গাড়ী থেকে নেমে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা চালাই। পরে ধাওয়া করে রেজাউল করিমকে ধরে ফেলে প্রতিপক্ষের লোকজন। এসময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে ( রেজাউল ) এলোপাতাড়ী কোপানো হয়। এতে তার দুই হাত, দুই পা, মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম হয়। পরে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে গেলে দূর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। রেজাউলকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে মাটিতে ফেলে রাখা হয়।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয়রা আহত রেজাউল করিমকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নওশাদ আলম কাকন বলেন, হাসপাতালে আনার আগে তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত যুবকের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর হামলার মামলায় রেজাউল করিম প্রধান আসামি ছিল। এরই জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে খুনের এ ঘটিয়েছে।
এরপরও খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলেন জানান ওসি।
ওসমান গণি আরো বলেন, নিহতের লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
[6/13, 10:57 PM] jamal uddin: প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে আটকা পড়া ৩ শতাধিক মানুষকে ফিরিয়ে আনতে অবশেষে নৌ যান চলাচল শুরু
জামাল উদ্দীন -কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
বঙ্গোপসাগর দিয়ে ৩ শতাধিক আটকা পড়া মানুষ কে নিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ রুটে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
গত ৫ জুন ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বন্ধ হওয়া সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের অবশিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা শেষে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন অফিসারদের নিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতায়তকারি নৌযান লক্ষ্যকরে গুলিবর্ষণ করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। যার কারণে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌ রুটে সাতদিন নৌ যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে মিয়ানমারে আটকা পড়া ৩ শতাধিক পর্যটকও সাধারণ মানুষ সহ দ্বীপ বাসী ব্যাপক খাদ্য সংকটে পতিত হয়।
বিষয়টি নিরঙ্কুশ নিরবিবেচনায় এনে অবশেষে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় নৌ যান চলাচল শুরু করেছে। তবে বৃহস্পতিবার নাগাদ পণ্যবাহী কোন ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দ্যেশে ছাড়েনি বলে জানিয়েছেলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের মুন্ডারডেইল এলাকার সাগর উপকূলের পয়েন্ট দিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলার যোগে আটকা পড়া প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী।
তিনি আরো জানান , দুপুর ১ টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি ঘাট থেকে ৩ টি ট্রলার যোগে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিরাপত্তায় অন্তত তিন শতাধিক মানুষ টেকনাফের উদ্দ্যেশে রওনা দেয়। বিকাল ৩ টার দিকে ট্রলারগুলো টেকনাফের মুন্ডারডেইল সাগর উপকূলে পৌঁছে। কিন্তু সাগরের প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে এসব ট্রলার থেকে লোকজনকে সরাসরি কূলে উঠানো সম্ভব হচ্ছিল না।
পরে কূল থেকে কয়েকটি ডিঙ্গি নৌকা উপকূলের কিছু দূরে সাগরে অবস্থানকারি ট্রলারগুলোর কাছে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বড় ট্রলার থেকে এসব মানুষকে ডিঙ্গি নৌকায় তুলে কূলে নিয়ে আসা হয়ে।
পরে আরো ৩ শতাধিক মানুষ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, গত ৭ দিন দ্বীপে আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় দ্বীপের খাদ্য পণ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এখন বিকল্পভাবে ট্রলার চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি মিলছে। যে ট্রলারগুলো গেছে ওই সব ট্রলার নিয়ে টেকনাফে থাকা মানুষ ফিরে আসবে।
টানা ৭ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া এবং পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে ইউএনও আদনান চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের সাগরের বিকল্প পথে যাত্রী পারাপার শুরু হলেও পণ্যবাহী কোন ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দ্যেশে টেকনাফ ছাড়েনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, মুলত কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে বড় জাহাজ যোগে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে যাবেন। এটা ব্যবসায়ী এবং জাহাজ মালিকরা মিলে করবেন। প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন। এছাড়া এখন বঙ্গোপসাগর হয়ে যে ট্রলার যাত্রী আসা-যাওয়া করছে ওখানে কিছু পন্য নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফলে খাদ্য সংকট হবে না।
এদিকে, টেকনাফের নাফনদীর সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের নিকটে টানা ২ দিন ধরে দেখা মিলছে বড় ধরণের এটি জাহাজ। আর সেই জাহাজ ও মিয়ানমারের স্থলে ভাগে বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত চলছে গোলাগুলি,এপারে ভেসে আসছে মর্টাশেলের বিকট শব্দ। এ বিকট শব্দে প্রবল প্রকম্পনে প্রকম্পিত হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তবর্তী এলাকা।