ভাতাভোগীদের অর্থ আত্মসাৎকারী সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের ৩ সদস্যকে প্রতারণায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার সংক্রান্তে জনাব উত্তম প্রসাদ পাঠক, পিপিএম-সেবা, পুলিশ সুপার, ঠাকুরগাঁও মহোদয়ের সভাপতিত্বে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত
ঠাকুরগাঁও হতে মোঃ মশিউর রহমান :
একটি সঙ্ঘবদ্ধ ডিজিটাল প্রতারক চক্র বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার করে প্রতিবন্ধী ভাতা-ভোগীদের রক্ষিত ভাতার অর্থ আত্মসাৎ করে নিচ্ছে মর্মে রাণীশংকৈল থানায় একটি অভিযোগ দাখিল হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার, ঠাকুরগাঁও মহোদয়ের নির্দেশক্রমে এএসপি, রাণীশংকৈল সার্কেল, ঠাকুরগাঁও অভিযোগটি ব্যাপকভাবে তদন্ত শুরু করেন।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, রাণীশংকৈল থানার আরো ০২ জনেরসহ সারাদেশব্যাপী শত শত প্রতিবন্ধী ভাতা-ভোগীর মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস একাউন্ট (বিকাশ/ নগদ) থেকে প্রতারক চক্রটি অর্থ আত্মসাৎ করছে। সমাজের দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সরকারের একটি বিশেষ অগ্রাধিকার খাত। দেড় কোটির বেশি জনগোষ্ঠী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভুক্ত। প্রতারকরা এই উপকারভোগীদের অর্থ আত্মসাৎ করলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থ-সামাজিক উনয়নের সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা ব্যাহত হবে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ভাতা-ভোগীদের নিকট থেকে অর্থ-আত্মসাতের বিষয়টি আরো বেশি গুরুতর ও স্পর্শকাতর।
উক্ত ঘটনার তদন্তে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও অপরাধ গোয়েন্দা তথ্য (Criminal Intelligence) যাচাই-বাছাই করে অপরাধের সাথে জড়িত একটি চক্রকে শনাক্ত করা হয়। এর ভিত্তিতে জনাব উত্তম প্রসাদ পাঠক, পিপিএম-সেবা, পুলিশ সুপার, ঠাকুরগাঁও এর সার্বিক দিক-নির্দেশনায় গত ১১ জুন ২০২৪ তারিখ থেকে জনাব মোঃ ফারুক আহমেদ, সহকারী পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল), ঠাকুরগাঁও এর নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকাসহ গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন স্থানে নিরবচ্ছিন্নভাবে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের ৩ সদস্য- ১. মোঃ আজল হক (৫৭), পিতা- মিহির উদ্দিন, সাং- মোন্নাপাড়া, ২. কামরুল ইসলাম @ হিরু (২৫), পিতা- মোঃ মোশারফ হোসেন, সাং- চন্ডিপুর ও ৩. মোঃ শাকিল (২৩), পিতা- আব্দুর রাজ্জাক, সাং- বিশ্বনাথপুর, থানা- গোবিন্দগঞ্জ, জেলা- গাইবান্ধাদের ডিজিটাল প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের নিকট থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মোবাইল ফোন, সিম, বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন এর কিট, অর্থ লেনদেনের রেকর্ডপত্র ও সিপিইউ জব্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, অপরাধী চক্রটি ১ম ধাপে, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতাভোগীদের তালিকা যে সকল সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সংরক্ষিত থাকে, সেসব প্রতিষ্ঠানের উক্ত তালিকা সংরক্ষণের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশ ও অর্থের বিনিময়ে উপকার ভোগীদের তালিকা সংগ্রহ করে। গত ১ জুন ২০২৪ তারিখ থেকে সরকার নতুন করে ৫ (পাঁচ) লক্ষাধিক প্রতিবন্ধী ভাতা-ভোগীদের বিকাশ/নগদে ০১ (এক) বছরের প্রাপ্ত ভাতা হিসেবে ১০,২০০/- (দশ হাজার দুইশত) টাকা করে প্রদান করছে। অপরাধী চক্রটি কৌশলে উক্ত তালিকা সংগ্রহ করেছে। এদের টার্গেট করে বিভিন্ন ডিজিটাল প্রতারণা করছে চক্রটি।
২য় ধাপে, অপরাধীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে Brilliant Apps দিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা-ভোগীদের ফোন করে নিজেদের সমাজ-সেবা অধিদপ্তরের লোক পরিচয় দিয়ে, তাদের একাউন্টে টাকা পাঠানো হবে মর্মে অভিনব কায়দায় ভাতা-ভোগীদের নিকট থেকে OTP সংগ্রহ করে, ভাতা-ভোগীদের বিকাশ/নগদ হিসাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।
৩য় ধাপে, প্রতারকরা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ভাতা-ভোগীদের নগদ/বিকাশ হিসাব থেকে তাদের চক্রের সাথে জড়িত নির্দিষ্ট বিকাশ/নগদ এজেন্ট হিসাবে টাকা ক্যাশ আউটের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে নেয়।
এভাবে দীর্ঘদিন ধরে শতশত প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য ভাতা-ভোগীদের অর্থ আত্মসাৎ করে নিচ্ছে চক্রটি। আমরা ইতোমধ্যে এই চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছি। এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এরইমধ্যে এই চক্রের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। বিস্তৃত তদন্ত করে প্রতারণার বিভিন্ন ধাপের সাথে জড়িত অন্যান্যদের সনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা যে সকল ডিভাইস জব্দ করেছি তার ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে।
আমি আপনাদের মাধ্যমে সকলকে সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। যাতে কেউ কোনোভাবেই কারো নিকট OTP শেয়ার না করে। আর যারা ইতোমধ্যে এরূপ ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তারা যেন সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত