বিশেষ প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জের তারালী ইউনিয়নের জাফরপুরে অবস্থিত কাজী আলাউদ্দীন কলেজে জীববিদ্য ও পদার্থবিদ্যা শাখায় ল্যাব সহকারী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ দু’টি পদে প্রক্সি প্রার্থী দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণসহ নিয়োগ দেয়ার চুক্তিতে সভাপতি ও অধ্যক্ষ পরষ্পর যোগসাজশে ৩০ লক্ষ টাকা বাণিজ্য করেছেন।স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ তোফায়েল আহম্মেদের বিতর্কিত কার্যক্রম যেন থামছেই না। তার নিজের অবৈধ নিয়োগ এবং নিয়োগ পরবর্তী সময় থেকে কলেজে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও কর্মচারী নিয়োগে অর্থবাণিজ্য, কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের মানসিক নির্যাতনসহ একের পর এক আলোচনা সমালোচনার মধ্যে আবারও তিনি জন্ম দিয়েছেন নতুন বিতর্কের। এ নিয়ে সম্প্রতি শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। নলতা, তারালী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় চলছে নিন্দার ঝড়।
জানা গেছে, বহুলালোচিত অধ্যক্ষ তোফায়েল আহম্মেদ প্রকাশ্য অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পান নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজে। সে সময় মামা নামক খুঁটির জোরে সরকারের প্রচলিত নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যা খুশী তাই করে অনিয়ম-দুর্নীতির রাজপুত্র হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন তিনি। এরপর কলেজে নিয়োগ বাণিজ্যসহ আর্থিক অনিয়ম করে বর্তমানে তিনি প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছেন।
তারা আরও জানান, খুঁটির জোরে প্রায় দুই বছর পূর্বে তিনি কালিগঞ্জের কাজী আলাউদ্দীন কলেজের সভাপতি মনোনীত হন। সেখানেও দেখাতে থাকেন ক্ষমতার দাপট। গত ২৩ জুন কাজী আলাউদ্দীন কলেজে জীববিদ্যা ও পদার্থবিদ্যা বিভাগে ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দু’টি পদে নিয়োগের জন্য ১৫ লক্ষ করে মোট ৩০ লক্ষ টাকায় কালিগঞ্জের সাতবসু গ্রামের রাকিবুল হাসান এবং শুইলপুর গ্রামের অমিয় কুন্ডুর সাথে চুক্তি হয়। পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা হবে জানতে পেরে ওই দু’টি পদে আবেদনকারী অন্যান্য প্রার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থেমে থাকেননি পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তোফায়েল আহম্মেদ। তিনি জীববিদ্যার ল্যাব সহকারী পদে পূর্বে মনোনীত রাকিবুল হাসানের হয়ে প্রক্সি দেয়ার জন্য তার নিজ প্রতিষ্ঠান নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজের আইসিটির ল্যাব সহকারী হিসেবে চাকুরিরত সুদীপ্ত সরকার ও একই কলেজের জীব বিজ্ঞানের ল্যাব সহকারী লামিয়া খাতুনকে ডেকে নেন।
এছাড়া পদার্থবিদ্যা বিষয়ের ল্যাব সহকারী পদে পূর্বে মনোনীত অমিয় কুন্ডুর পক্ষে প্রক্সি দিতে ডেকে নেন নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজে চাকুরিরত পদার্থবিদ্যার ল্যাব সহকারী বিশ^জিৎ পাল এবং মনোনীত প্রার্থী অমিয় কুন্ডুর গ্রামের প্রক্সি প্রার্থী সমীর কর্মকারকে।শেষ পর্যন্ত পূর্বে মনোনীত দুই প্রার্থীকে কাজী আলাউদ্দীন কলেজে নিয়োগের জন্য চুড়ান্ত করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন। বড় অংকের উৎকোচ গ্রহণ ও চাকুরিরত প্রার্থীদের দিয়ে প্রক্সি দেয়ার বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন অভিভাবক ও সূধীমহল।
এব্যাপারে কাজী আলাউদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ আরিফ বিল্যাহর নিকট মুঠোফোনে (০১৭১৬-৫০৪১১৮) জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে সভাপতি সাহেবের সাথে কথা বলেন। তাছাড়া আমি মোবাইলে কোন কথা বলবো না। কলেজে এসে দেখা করার প্রস্তাব দেন তিনি।
কাজী আলাউদ্দীন কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ তোফায়েল আহম্মেদের নিকট মুঠোফোনে (০১৭১১৬৬৮২৬৪) যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমার সবকিছু মনে নেই। কিছু জানার থাকলে কাজী আলাউদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। তার নিজের কলেজে চাকুরিরত কতজন ল্যাব সহকারী কাজী আলাউদ্দীন কলেজে ল্যাব সহকারী পদে পরীক্ষা দিয়েছেন সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনিও কলেজে এসে তার সাথে দেখা করতে বলেন।