প্রশান্ত কুমার (শান্ত) ক্রাইম রিপোর্টার (ঢাকা)
১০ জুলাই ২০২৪ রোজ বুধবার, ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক ভাই বোনের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। হরিজন-দলিত ভূমিরক্ষা জোটের পক্ষ থেকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা গ্রহন করবেন। আমরা এদেশের নাগরিক একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এক দূর্যোগ সময়ে হতাশা নিয়ে আপনাদের সামনে দাড়িয়েছি। আপনাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে আমাদের এই দূর্যোগের কথা রাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরার আহবান করছি। আপনারা নিশ্চই অবগত আছেন যে, পুরান ঢাকার ২৫নং আগাসাদেক রোড মিরনজিল্লা হরিজন কলোনীতে ব্রিটিশ শাসন আমল হতে প্রায় ৪০০ বছর যাবৎ মিরন বাঈ নামের একজন দয়াবান মহিলা আমাদের পূর্বপূরুষদের বসবাস করার জন্য জমি দান করেন। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে হরিজন জনগোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধুর আহবানে এদেশকে পরাধিন হতে স্বাধীনতার আওয়াজ আসলে এদেশের দলিত- হরিজনরা ঝাপিয়ে পড়েছিল। যার সাক্ষী বহন করে দাড়িয়ে আছে স্মৃতির শহীদ মিনার। মিরনজিল্লার ১০জন শহীদ সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা নিরবে ঘুমিয়ে আছেন স্বিকৃতির জন্য।
মিরনজিল্লা হরিজন কলোনীতে প্রায় ছয় হাজার বসবাসকারীর স্থায়ী ঠিকানা ২৫ নং আগা সাদেক রোড হরিজন কলোনী, হাজারো বাধা অতিক্রম করে আমাদের সন্তানেরা এই শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজ সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। সেই কমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে কিশোর গ্যাং, মাদকব্যবসায়ী, ভূমিদুশ্য বলে কুরুচিপূর্ণ বক্তবের তিব্র নিন্দা জানাই। তিনিও সন্তানের বাবা কি করে এই ভাষা ব্যাবহার করেছেন আমরা পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছু বলতে পারি না।
আমরা হরিজন জনগোষ্ঠী বংশপরম্পরায় নগরের সূচিতা আনার পবিত্র দ্বায়িত্ব পালন করে থাকি, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, হাট-বাজার, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ন পেশার কাজ করলেও আমাদের প্রতি মূলশ্রোতধারার বৈষম্য পিছ ছাড়ে না। উন্নয়ন ও সৌন্দর্যের আলো নগরজীবনে পড়লেও আমরা অন্ধকারে অথচ আমরা কোন দ্বীপবাসী নই, বা বিতাড়িত জনগোষ্ঠী নই, আমরা এদেশের নাগরিক। আমরা ৮/১০ ফিটের একটি রুমে ৩/৪টি পরিবার গাদাগাদী করে বসবাস করি। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে কষ্ট করি। আমাদের স্বল্প আয়ের সংসার নুন আনতে পানতা ফুরায়। আমাদের শুখের নীড়ে শকুনের চোখ পড়ে। গত ৪ জুন ২০২৪ আমরা জানতে পারি মিরনজিল্লা হরিজন কলোনীতে কিছু পরিবারকে উচ্ছেদ করে বহুতল মার্কেট করা হবে। আমরা প্রতিনিধি মেয়র সাহেবের সাথে দেখা করি। তিনি আমাদের সাথে কথা বলে আমাদের অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের উর্দ্ধেতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে অফিস ত্যাগ করার সময় আমরা জানতে চাই তিনি তখন আমাদের বললেন ২০টির মতো ঘর ভাংতে হবে। এবং তিনি আরো জানালেন তোমরা সম্পত্তি কর্মকর্তার সাথে কথা বলো। আমরা সেখানে যাই, তিনি জানালেন কালকে সকালে মাপযোগ করে বলা যাবে। এদিকে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব দুইটি বুলডোজার ও চার প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ নিয়ে বিনা নোটিশে উচ্ছেদ শুরু করলে হরিজনদের আহাজারি ও কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে যায়। মিরনজিল্লার কমলমতি শিশুরা বুলডোজারের সামনে এসে দাড়ায়। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে ভূমিকম্পে হেলে যাওয়া বিল্ডিং নতুন করে নির্মান করার উদ্দ্যোগ গ্রহন করে সিটি করপোরেশন। সেই ভবনটিতে বাস করতো ৫০টি ঘরে ১২০টি পরিবার। তারা সবাই স্কুলের ছাদে এবং বিল্ডিং এর ছাদে জীবনের ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে। অথচ ঢাকা সিটি করপোরেশন উচ্ছেদের খবর চাপানোর জন্য মিথ্যা প্রকাশ করে বলছে তাদের ৯ই জুন তড়িঘড়ি করে চাবি বিতরনের মেলা বসায়। পূর্বের ৬০টি ক্ষতিগ্রন্থ পরিবারেরর মধ্যে মাত্র ১৫টি পরিবারকে বাসার চাবি দেয়া হয়। অবশিষ্ট ঘরের চাবি পায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের।
কোন প্রকার নোটিশ প্রদান না করে এবং যাদের ঘর ভাঙ্গা হবে তারা কোথায় থাকবে তার ব্যবস্থা না করেই ১০ জুন সকালে বুলডোজার দিয়ে কাউন্সিলর মাস্তানবাহিনীরা হরিজনদের ঘর গুড়িয়ে দেয়। এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে সেদিন উচ্ছেদের কাজ বন্ধ হযে যায়, পরের দিন ১১ জুন আবার উচ্ছেদের জন্য আসলে মিরনজিল্লা কলোনীর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বুলডোজারের উপর ঝাপিয়ে পড়লে উচ্ছেদের কার্যক্রম থেমে যায়। ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে বার বার পূর্নবাসনের কথা বলেও প্রতিনিধিরা কোন সৎ উত্তর পায় নাই। পরের দিন বিভিন্ন মিডিয়া, ও সংবাদপত্রে সংবাদ ও ছবি প্রকাশিত হলে প্রতিবেদনগুলো বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাই কোর্ট ডিভিশনে ২জন আইনজীবী দাখিল করেন। মাননীয় বিচারপতিগন বলেন "বিষয়টি যথাযথভাবে কোর্টে দাখিল করেন" সে অনুযায়ি ১৩জুন ২০২৪ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের ৩ জন আইনজীবী পিটিশনার হিসেবে ৮১১৯/২০২৪ নং রিট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট ডিভিশনের মাননীয় বিচারপতিদ্বয় আবেদনকারী এবং সরকার পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে সন্তুষ্ট হয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রম কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না এই মর্মে কারন দর্শানোর নোটিশ জারি করেন এবং ৩০দিনের স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন। এতদসংগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে উচ্ছেদকৃত পরিবার এবং সম্ভ্যাব্য উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোকে ২১ জুলাই ২০২৪ এর মধ্যে পূর্নবাসনের নির্দেশনা দেন। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশন মহামান্য আপিলেট ডিভিশনে ২২২৭/২০২৪ নং সিভিল পিটিশন দায়ের করেন। উক্ত সিভিল পিটিশনে স্টে পিটিশন দায়ের করে বিগত ১ জুলাই ২০২৪ তারিখে চেম্বার জজ আদালতে শুনানী করেন। মাননীয় আদালত কোন আদেশ প্রদান না করে আপীলেট ডিভিশনে ফুল বেঞ্চে দরখাস্তটি শুনানীর জন্য প্রেরন করেন- যাহা এখন শুনানীর জন্য অপেক্ষমান। এইসব সংকটজনক পরিস্থিতিতে একজন মিরনজিল্লাবাসী আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় এবং ২ জন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়।
আমরা এলাকাবাসী কখনো ভাবতে পারি নাই এই এলাকা থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হবে। আমরা সব সময় সরকার এবং সিটি করপোরেশনের উপর নিশ্চিন্ত মনে নির্ভর করেছিলাম। অতিতেও আমাদের জমিতে স্কুল, বাজার, স্বাস্থ্য সদন, পাবলিক টয়লেট,