মোহাম্মদ দুদু মল্লিক, শেরপুর প্রতিনিধি :
শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার চৈতাজানি (চেঙ্গুরিয়া) গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুল মান্নানের ছেলে শরিফুল ইসলাম। পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পান। একসময় তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি জনাব মোখলেছুর রহমান পান্নার গানম্যান হিসেবে নিয়োগ পান । উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সান্নিধ্য ও পুলিশ সদর দপ্তরে চাকুরী করার সুবাদে তিনি কোন এক জাদু বলে আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান । কয়েক বছরের মধ্যে তিনি নিজ গ্রাম, পার্শ্ববর্তী এলাকা,নিজ উপজেলা ও জেলা শহরে তার ক্রয়কৃত জমির মূল্য কয়েক কোটি টাকা। শেরপুর জেলা শহরে গৌরীপুর এলাকায় তার একটি সুরম্য পাঁচতলা বাড়ী রয়েছে, যার বাজার মূল্য দুই কোটি টাকার উপর। পৌর সভার পূর্ব অনুমতি ছাড়া, পৌরকোড অমান্য করে এবং প্রতিবেশীদের দূর্ভোগের মধ্যে ফেলে পৌরসভার নিষেধ স্বত্বেও তিনি ভবনটি নির্মান করেন।
শেরপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ হেফজুল বারী খান ০৩/১০/২০১৯ ইং তারিখে চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবরে এক লিখিত আবেদনে পুলিশ সদস্য শরিফুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেন। শরিফুলের তদবিরের কারণে রহস্যজনকভাবে দুদক নিজে অভিযোগটি তদন্ত না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগটি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠায়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অভিযোগটি তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার শেরপুর বরাবরে পাঠায়। তৎকালীন শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও এ,এস,পি সার্কেল মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম অভিযোগটি তদন্ত করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম তদন্তের শুরু থেকেই রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেন। বিষয়টি অভিযোগকারী ডাঃ হেফজুল বারী খান তৎকালীন পুলিশ সুপার কাজী মোঃ আশরাফুল আজিমকে একাধিকবার জানালেও সুস্থ তদন্ত নিশ্চিত করতে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। উপরের মহলের তদবিরের কারণেই হোক অথবা নিজেরা লাভবান হয়েই হোক তারা পরস্পর যোগসাজসে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য শরিফুল ইসলামকে সম্পূর্ণ দায় মুক্তি দিয়ে একটি অসত্য তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে প্রেরণ করেন। অভিযোগকারী একজন সমাজ সচেতন ও দায়িত্বশীল মানুষ। এহেন অসত্য তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে তিনি ২৭/০৪/২০২৩ ইং তারিখে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বরাবরে পূনঃ তদন্ত চেয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কোন সাড়া না পেয়ে তিনি অনন্যোপায় হয়ে শেরপুর জেলা দায়রা জজ আদালতে দূর্নীতি দমন আইনের সূনির্দিষ্ট ধারায় ০৮/০৫/২০২৩ ইং তারিখে পুলিশ সদস্য শরিফুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মাননীয় আদালত মামলাটি গ্রহণ করে উপ-পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত কার্যালয় জামালপুর কে দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন । অনুসন্ধানে জানা যায় যে দুর্নীতি দমন কমিশন জামালপুর থেকে অদ্যাবধি কোন তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়নি। যেখানে দূদক সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন দুই মাসেই আদালতে দাখিল করতে পারে সেখানে দূদক জামালপুর পুলিশ সদস্য শরিফুলের সম্পদের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন কেন এক বছরেও আদালতে দাখিল করতে পারেনি বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। দুদক জামালপুর এখনো পুলিশ সদস্য শরিফুলের অবৈধ সম্পদ জব্দের জন্য আদালতে কোন আবেদন করেনি। সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে শরিফুল যেকোনো সময় তার অবৈধ সম্পদ বিক্রি করে সীমান্ত অতিক্রম করে দেশ ত্যাগ করতে পারেন। দূদক জামালপুরের তখন কি করার থাকবে? ইতিমধ্যে জনমনে একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, একজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও তিনি কি করে পুলিশ সদর দপ্তরে বছরের পর বছর কমরত থাকছে ? তাহলে দুদক কি শরিফুলের ব্যাপারে ছাড় দিয়ে তদন্ত করছে ? বিষয়টি নিয়ে দুদকের মাননীয় চেয়ারম্যান সহ উর্ধ্বতন কমকর্তাদের দৃষ্টি আকষণ করছি।