শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের মহারশি নদীর বালু মহাল থেকে উত্তোলনকৃত বালু বিক্রির টাকা যাচ্চে বিএনপি নেতার পকেটে। ফলে চরম বিপাকে রয়েছেন ইজারাদার। এ অভিযোগ বালু মহালের ইজারাদারের লোকজনের।
জানা গেছে, চলতি বছর মহারশি নদীর বালু মহাল ইজারা লাভ করেন শেরপুরের আসাদুজ্জামান স্বপন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যে টেন্ডারের মাধ্যমে ১ বছরের জন্য মহারশি নদীর বালু মহালটি ইজারা দেয়া হয়। যথারীতি বালু মহালটি ইজারাদারকে বুঝিয়ে ও দেয়া হয়।
জানা গেছে, ইজারাদারের লোকজন বালু উত্তোলন করে আসছিল। ইতিমধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগষ্ট সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওইদিন বিকালে নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুকুনুজ্জামানের নেতৃত্বে ওইদিন বিকালে কিছু সংখ্যক যুবদলের নেতা-কর্মী মহারশি নদীর হলদীগ্রাম বালু মহালে এসে।
তারা বালু শ্রমিক ও বালু মহালের ইজারাদারের লোকজনকে হুমকি দেয় যে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলে বালু উত্তোলন যন্ত্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের হত্যা করা হবে।
এ হুমকিতে মহারশি নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন ইজারাদার ও বালু শ্রমিকরা। ফলে বালু উত্তোলনের সাথে জরিত ৫ শতাধিক বালু শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা -লেখি ও হয়েছে। অবশেষে ৫ দিনপর বালু উত্তোলন পুনরায় শুরু হয়েছে। বালু বিক্রিও শুরু হয়েছে। বালু বিক্রি করছেন বালু শ্রমিকও বলু মহালের ইজারাদার ।
কিন্তু নানা অযুহাতে বালু বিক্রির রাজস্ব আদায়ের টাকা যাচ্ছে বিএনপি নেতা রুকুনুজ্জামের পকেটে। জানা যায়, প্রতিট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা।
ট্রাকপ্রতি ইজারাদারের রাজ্স্ব নেয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। বালুর ট্রাক থেকে রাজস্ব নিচ্ছেন ইজারাদারের ব্যবসায়ী শেয়ারদার ফারুক মিয়া ও কেয়ারটেকার টুটুল মিয়া।
সারাদিনে বিক্রিকৃত বালু থেকে রাজস্ব আদায় হচ্ছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।
তাদের অভিযোগ সারাদিন রাজস্ব আদায় শেষে সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা রুকুনুজ্জামের লোকজন এসে পুরো টাকা নিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে। এ বিষয়ে কেউ মুখ খুললে বা কোথাও কোন অভিযোগ করা হলে জানে মেরে ফেলার হুমকি ও দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
এ কারণে বালু মহালের ইজারাদার ও তার লোকজন কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের কেউ কেউ। উল্লেখ্য,যে ইজারাদারের লোকজন কেউ আওয়ামী লীগের সাথে জরিত নেই।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে বিএনপি নেতা রুকনুজ্জামান মহারশি নদীর বালু মহালের ইজারাদার ও তার লোকজনের সাথে এ ধরনের আচরণ করে আসছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। ফলে চরম বিপাকে রয়েছেন ইজারাদারের লোকজন।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা ও রুকুনুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি বালু মহাল থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন বালু মহালের ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপনের কাছ থেকে বালু শ্রমিক ও মেশিন মালিকরা টাকা পাবেন।
একারণে বালু বিক্রির রাজস্বের টাকা আনা হচ্ছে। ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপন বালু মহালে এলে পাওনাদারদের সাথে আলোচনা করে এসব টাকার ব্যবস্তা করা হবে। তিনি বলেন চেয়ারম্যান হিসাবে এটা তার অধিকার বলে তিনি মনে করেন।
মহারশি নদীর বালু মহালের ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন তার কাছে কেউ একটি টাকাও পাবেনা। চেয়ারম্যান সাহেবের কথাটি মিথ্যা ও প্রতারনামুলক।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহজাহান আকন্দের সাথে কথা হলে তিনি কোন অন্যায়কে সমর্থন করেন না বলে জানান। এবং তিনি বলেন কেউ যদি কোন অপরাধ করেন তার দ্বায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেলের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেন নি।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, বৈধভাবে বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়েছে। এতে যদি কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে ইজারাদার আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।