1. Jahidksb@gmail.com : Jahid Hasan : Jahid Hasan
গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ ও বাংলাদেশের এ সনদে যুক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপট - খবর সকাল বিকাল - Khobor Sokal Bikal    
বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
বাগেরহাটে ফাতেমারানী গির্জা ও সাধু আন্তনির গির্জায় বড়দিন উদযাপন গোলাম ফারুক খোকন ভাই কে জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই শামীম ভূঁইয়া মাদারীপুরের রাজৈরে আল্লামা রুহুল আমিন (রহঃ) ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর শীতবস্ত্র বিতরণ ভূরুঙ্গামারীতে ভটভটি উল্টে চালকের মৃত্যু কেশবপুরের বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নে বিএনপির কর্মী সভা অনুষ্ঠিত গোপালগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি এর দায়িত্ব অর্পণ গাজীপুর মহানগরের বিভিন্ন গীর্জা পরিদর্শন করেন জিএমপি’র মাননীয় পুলিশ কমিশনার লালমনিরহাট আদিতমারীতে ১টি দেশী গাভীর পেট থেকে দুটি বাছুর প্রসব করেছে ২৫শে ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটিতে, কলকাতার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে জনজোয়ার, মানুষের ঢল সাভারে ছাত্র জনতার আন্দোলনে গণহত্যার মামলায় জহিরুল ইসলাম পান্না গ্রেফতার

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ ও বাংলাদেশের এ সনদে যুক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপট

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

 

রিপোর্টার: মো. আহসান উদ্দীন

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ (International Convention for the Protection of All Persons from Enforced Disappearance, CED) হলো একটি আন্তর্জাতিক সনদ যা রাষ্ট্রীয় বা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত গুমের ঘটনা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছে। এই সনদের প্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাস একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফলাফল, যেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন এবং রাষ্ট্রসমূহের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বাংলাদেশ সম্প্রতি এই সনদে যুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে, যা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের প্রতিষ্ঠা, ইতিহাস
ও সনদের পটভূমি:

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের ইতিহাস মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আন্দোলনের সাথে যুক্ত। বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, যুদ্ধবন্দী এবং সাধারণ মানুষকে গুম করার ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে, বিশেষ করে ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে, সামরিক শাসনের অধীনে এই ধরনের গুমের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটতে থাকে। এই প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক মহলে গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট সনদ প্রণয়নের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

১৯৮০ সালে, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন (বর্তমানে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ) গুমের ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে একটি কার্যকরী দল (Working Group on Enforced or Involuntary Disappearances) গঠন করে। এই দলটি গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার এবং রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে কাজ করত এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য প্রচেষ্টা চালাত।

২০০১ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের একটি বিশেষ সভায়, গুমের বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক সনদ প্রণয়নের জন্য একটি খসড়া তৈরির প্রস্তাব করা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর, ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই সনদটি গৃহীত হয়। এটি ২০০৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এবং ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর এটি কার্যকর হয়, যখন ২০টি দেশ এটি অনুসমর্থন করে।

সনদের মূল বিষয়বস্তু:
গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে নির্দিষ্ট কিছু মৌলিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেমন:
– গুমের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান।
– গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের অধিকার রক্ষা।
– গুমের শিকার ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা।
– গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা।

বিশ্বব্যাপী সনদের প্রভাব:

গুমবিরোধী সনদটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ এই সনদে স্বাক্ষর এবং অনুসমর্থন করেছে, যা তাদের নিজেদের মধ্যে গুমের ঘটনা প্রতিরোধ এবং এই ধরনের ঘটনার শিকারদের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। এ ছাড়াও, এই সনদ গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য একটি আইনি ভিত্তি প্রদান করে, যার মাধ্যমে তারা তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে পাওয়ার এবং ন্যায়বিচার লাভের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পেতে পারে।

বাংলাদেশের গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপট:

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে ২০১০ সালের পর থেকে, দেশটিতে রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য, মানবাধিকার কর্মী, এবং সাংবাদিকদের গুম করার অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ বাংলাদেশকে এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে।

বাংলাদেশের গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া:

জাতিসংঘের গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলো ২০২৪ সালের আগস্টে সরকারের পক্ষ থেকে এই সনদে স্বাক্ষর করার ঘোষণা। এই সিদ্ধান্তটি বিভিন্ন পর্যবেক্ষক এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
সিদ্ধান্ত টি মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শুধু আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করবে না, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গুমের ঘটনা রোধ করার জন্য এটি একটি শক্তিশালী আইনি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে এবং গুমের শিকারদের পরিবারকে ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হলেও, কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপটি বাস্তবায়নের সত্যিকারের সদিচ্ছার অভাব, দেশের আইনি ও প্রশাসনিক কাঠামোর দুর্বলতা, বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাথে সরকারের সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। এই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে, সনদে যুক্ত হওয়ার প্রকৃত ফলাফল পাওয়া কঠিন হতে পারে।

তবুও, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। সনদটি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, তবে এটি গুমের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে এবং দেশের মানবাধিকার রেকর্ডকে উন্নত করতে পারে। এ জন্য সরকারের স্বচ্ছতা, আন্তরিকতা, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতা অপরিহার্য।

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সনদ, যা বিশ্বজুড়ে গুমের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের এই সনদে যুক্ত হওয়া মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে, এই পদক্ষেপের সফল বাস্তবায়নের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© ২০২৪  সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি