স্টাফ রিপোর্টার :
(বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই এস এম জাহাঙ্গীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইতিমধ্যে দখলবাজ-চাঁদাবাজ হিসেবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছে এমনটাই বক্তব্য উত্তরার প্রবীণ-বিএনপি নেতা কর্মীদের)
রাজধানীর উত্তরার ঢাকা ১৮ আসনের প্রতিটি সেক্টরে নিরবে চলছে চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্য। এ পরিস্থিতিতে উপদেষ্টাদের হস্তক্ষেপ চেয়েছে উত্তরার বিভিন্ন সুশীল সমাজের মানুষেরা। বিশেষ করে কয়েকদিন পর যে যৌথ বাহিনীর অভিযান নামবে সেখানে উত্তরার বিশেষ বিশেষ চাঁদাবাজদের তালিকা করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। অন্যদিকে উত্তরার আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, শুধু চাঁদাবাজ দখলবাজদের মুখ বদল হয়েছে। প্রকাশ্যে না হলেও তারা নিরবে চাঁদা তুলছে। বর্তমানে বৃহত্তর উত্তরার সবচেয়ে বড় চাঁদাবাজ হিসেবে যার নাম এসেছে সে হচ্ছে এস এম জাহাঙ্গীর। এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা না হলেও, এলাকার ঘর জামাই হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর, যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি হওয়ার কারণে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উত্তরার আওয়ামী লীগের সকল চাঁদাবাজ দখলবাজ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেছে, এই সুযোগে বর্তমানে অবৈধ আয়ের সকল উৎসগুলো দখল করেছে জাহাঙ্গীর এবং তার পালিত গুন্ডারা। এই কাজে তাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছে মিলন নামে স্থানীয় একজন সন্ত্রাসী। মিলন নিজেকে যুবদল নেতা হিসেবে পরিচয় দেয় এবং যেখানে সেখানে জাহাঙ্গীরের ছবির সাথে নিজের ছবি দিয়ে পোস্টার লাগায়, মিলন উত্তরা পশ্চিম থানার যুবদলের সভাপতি হতে চায়। এস এম জাহাঙ্গীর ও মিলনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য। এরাই মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাথে সাথে উত্তরায় যে ছাত্র জনতার নামে লুটতরাজ হয়েছে, তাদের বড় একটি অংশই এই গ্রুপের সদস্য বলে জানা যায়। এই বিশাল লুটেরা বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী সরকার যেতে না যেতেই এবং বিএনপি এখনো ক্ষমতায় আসে নাই এই পর্যায়েও এস এম জাহাঙ্গীর বিএনপির আগামীর তারেক রহমানের মিশন-ভিশন এবং নেতৃত্বের তোয়াক্কা না করে উত্তরার বিএনপিকে ডুবাতে চাঁদাবাজি দখল বাজির সিদ্ধহস্তে নিজেকে সমর্পণ করে, মাত্র এক মাসের মাথায় নিজেকে চাঁদাবাজ-দখলবাজ এবং সন্ত্রাসী মিলনের মত অসংখ্য সন্ত্রাসীর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে ।
উত্তরায় ২০ স্পটে এস এম জাহাঙ্গীরের পৃষ্ঠপোষকতায় মিলনের নেতৃত্বে দিনে চাঁদা উঠে ২৫ লাখ টাকা! আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে যত বস্তিঘর উঠেছে সকল বাসা থেকে টাকা তুলে মিলন।
রাস্তার পাশে ও ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে টাকা নেওয়া হয়। বাস, অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার থেকেও তোলা হয় চাঁদা।
রাজধানীর উত্তরা এলাকার স্থানীয় যুবক মিলনের কথা গত ১৭ বছর অনেক কষ্টে চলেছি, না খেয়ে ছিলাম এবার কেউ আমাকে ঠেকাতে পারবেনা। হাউস বিল্ডিং এলাকায় সোনারগাঁও জনপদ রোডে ফুটপাতে ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করে সোহেল। নানা ধরনের পোশাক বিক্রি করে দিনে হাজার টাকার মতো আয় হচ্ছিল তার। তবে সোহেলের আক্ষেপ, এই আয়ের প্রায় অর্ধেকই তুলে দিতে হয় স্থানীয় চাঁদাবাজদের হাতে। তাদের বেশির ভাগই এস এম জাহাঙ্গীরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এক স্বৈরাচার সরকার গিয়েছে অন্য সরকার ক্ষমতায় আসার আগেই শুরু করে দিয়েছে চাঁদাবাজি। হকারদের মধ্য থেকেও কেউ কেউ আসে স্থানীয় মিলনের হয়ে চাঁদা তুলতে।
শুধু সোহেলের ভ্যানই নয়, উত্তরা এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাতের অবৈধ দোকান, বাস-টেম্পোর স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্পটে নিয়মিত চলছে চাঁদাবাজি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, উত্তরা এলাকার ২০ স্পটে প্রতিদিন চাঁদা আদায় হয় অন্তত ২৫ লাখ টাকা। এইসব টাকা চলে যায় এস এম জাহাঙ্গীরের নিকট। এস এম জাহাঙ্গীরের বাসার সামনে বাসার ভিতরে সব সময় কয়েক’শ ছেলেপেলের আনাগোনা রয়েছে।
হাউস বিল্ডিং এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সোহেলের ভ্রাম্যমাণ দোকানের মতো আরো পাঁচ শতাধিক দোকান বসে ফুটপাতে এবং রাস্তার পাশে। সব দোকানিকেই প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়। ভুক্তভোগী সোহেল বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে চিহ্নিত চাঁদাবাজরা রাস্তা দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের টাকা না দিলে ফুটপাতে দোকান বসানোর সাধ্য কারো নেই। তার অভিযোগ, টাকার মেশিন অর্থাৎ অর্থ কামানোর হাতিয়ার হিসেবে এই চাঁদাবাজরা রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিশেষ কদর পায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অনেক চাঁদাবাজ ফুটপাতের অবৈধ দোকান থেকে শুরু করে নামী-দামী শপিং মলে দোকানের পজিশন নিয়ে মালিক বনে গেছে।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা যাওয়ার পর উত্তরা ঢাকা ১৮ আসনের আগামীতে সংসদ নির্বাচন করবে এস এম জাহাঙ্গীর এরকম অহংকারে তার পা নাকি এখন মাটিতে পড়ে না। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তিনি এলাকায় চাঁদাবাজি বন্ধ করার বিষয়ে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন। প্রায় সময় জাহাঙ্গীর বক্তৃতায় বলেন, ‘অনেকে অনেকভাবে গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে খায়, এটা ঠিক নয়। যেসব নেতা এসব কাজ করেন, তারা দলের জন্য বোঝা, তারা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার ত্যাগে অর্জিত সাফল্যকে কলঙ্কিত করছেন।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে কমিটিতে তাদের ব্যাপারে অবশ্যই চিন্তা-ভাবনা করা হবে। রাজনীতির নামে রাস্তাঘাট দখল করে, চাঁদাবাজি করে খাবে, আমরা এ সংস্কৃতি রাখতে চাই না। যারা রাজনীতি করেন, চাঁদাবাজি করেন, তাদের এটা বুঝতে হবে। আমি উত্তরা এলাকায় এসব চাঁদাবাজি চলতে দেব না। এলাকাবাসীর বক্তব্য তারেক রহমানকে এবার যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী ঘোষণা দিতে হবে এস এম জাহাঙ্গীরের মত লোককে যদি নমিনেশন দেওয়া হয় তাহলে আবার ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান ঘটতে পারে এমনটাই মন্তব্য তাদের।
চাঁদাবাজির ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা জোনের উপ পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘রাস্তা আটকে কোনো দোকানপাট বসলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তাছাড়া পরিবহনের চাঁদাবাজির বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অথচ নাকের ডগায় আব্দুল্লাহপুরের সকল বাস স্টপ থেকে সমানে চাঁদা তুলছে জাহাঙ্গীরের ছেলে পুলেরা। আব্দুল্লাহপুরের বেড়িবাঁধের উপরে অলরেডি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় দোকান বরাদ্দের নামে পজিশন ভাড়া দিচ্ছে এস এম জাহাঙ্গীরের লোকেরা। ভুক্তভোগীসহ স্থানীয় অনেক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরায় প্রায় ২০ স্পটে প্রতিদিন টাকা তুলে অন্তত ২০-৩০ জন চিহ্নিত চাঁদাবাজ। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ এস এম জাহাঙ্গীর এবং তার মনোনীত লোকেরা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন বলে অভিযোগ আছে। এসব স্পট থেকে রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রতিদিন চাঁদা উঠে প্রায় ২৫ লাখ টাকার বেশি। চাঁদার এ টাকার বড় অংশ যায় রাজনৈতিক রাঘববোয়ালদের পকেটে, কিছু যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু সদস্যদের হাতে। চাঁদা তোলার কাজে অপরিচিত লোকদের ব্যবহার করা হলেও পেছনে আছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, তার আত্মীয়সহ প্রতিটি থানার বড় রাজনৈতিক নেতারা। রাজনীতি করতে, মিটিং-মিছিল করতে খরচ লাগে এমন অজুহাতে উত্তরার প্রতিটি থানার অনেক নেতা চাঁদা তোলার সঙ্গে জড়িত, এর মধ্যে মিলন উল্লেখ্যযোগ্য।
সরেজমিনে গিয়ে উত্তরার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ঘুরে চাঁদা তোলার ২০টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজউকের জায়গা দখল করে অবৈধ দোকানপাট, ফুটপাতসহ ৯-১০টি স্পট এবং আন্তজেলা পরিবহন, টেম্পো, হিউম্যান হলার বা লেগুনা স্ট্যান্ডসহ ১০টি জায়গা থেকে চাঁদা ওঠে। এর বাইরেও অনেক স্পটে চাঁদাবাজি চলে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। উত্তরার আবদুল্লাহপুর এলাকায় অন্তত চারটি জায়গা থেকে প্রতিদিন চার-পাঁচ লাখ টাকা আদায় করা হয়। বেড়িবাঁধ হয়ে উত্তরখানের রাস্তায় চলাচল করা তিন শতাধিক অটো থেকে টাকা তোলা হয় প্রতিদিন দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে। এর বড় অংশ যায় এস এম জাহাঙ্গীরের পকেটে এবং দুই রাজনীতিকের নামে। হাউস বিল্ডিং এলাকায় টেম্পো ও ফুটপাতের দোকান থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ওঠে। আজমপুর ফুটপাত, রাজউক, কাঁচাবাজার, দুইপাড়ের অটো ও টেম্পো থেকে যে টাকা তোলা হয়। সোনারগাঁও জনপদ রোডে দখল ও চাঁদাবাজি চলে বেশ কয়েকজন রাজনীতিকের নামে। এখন এগুলো পাল্টে আওয়ামী লীগের নেতাদের জায়গায় বিএনপি নেতারা টাকা নিচ্ছে। রাজলক্ষ্মী এলাকায় চাঁদা তোলা হতো অন্তত পাঁচ নেতার নামে। এখন সব বিএনপি'র নেতারা নিচ্ছে। এলাকার বিভিন্ন পরিবহনের চাঁদাবাজির সঙ্গেও বিএনপি'র রাজনৈতিক নেতারা জড়িত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্পূর্ণ এলাকা ঘুরে একটি বিষয়ে পরিষ্কার হয়েছে সকলের একটি কথা এখনো বিএনপি ক্ষমতায় আসেনি এস এম জাহাঙ্গীর যা শুরু করেছে তাতে উত্তরায় বিএনপি ডুবে যাবে, বিএনপির কবর দেবে এসব নেতারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই অল্প সময়ের মধ্যে এসব চিহ্নিত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানা সহ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা এবং পুলিশ কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা মন্ডলীর নিকট অভিযোগ জমা পড়েছে বিস্তর।