স্টার্ফ রিপোর্টার:
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার মেহার উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো: জাবেদ হোসেন আওয়ামী লীগের আমলে দূর্নীতি, গ্রেফতার বানিজ্য করেই ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন।
সরজমিনে তদন্ত করে জানা যায়, শাহরাস্তি বাজার, দোয়াভাঙ্গা বাজার, অফিস চিতোষী বাজারে রয়েছে তার চেম্বার পেশায় দলিল লেখক হলেও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পরই ভাগ্য খুলে যায়। শুধু শাহরাস্তি বাজারেই রয়েছে তাদের পরিবারের ১১টি দোকান ঘর। বাড়ি কিনেছেন, কুমিল্লা শহরস্থ রেইসকোর্সে, কুমিল্লা সাত্তার খান কমপ্লেক্স এ রয়েছে একাধিক দোকান, কলকাতার বড় বাজারের নিকট রয়েছে একটি হোটেলের অংশিদারিত্ব। জেদ্দায় রয়েছে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশিদারিত্ব, দুবাই এ রয়েছে একটি স্বর্নের দোকানের অংশিদারিত্ব। তার বাড়িতে, দোয়াভাঙ্গা চেম্বারের উপরের বাসা হিসাবে ব্যবহৃত এবং কুমিল্লার বাসায় রয়েছে টর্চার সেল।
এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা যায়, জাবেদের তিনটি টর্চার সেল রয়েছে। এই সব টর্চার সেলে বিরোধীদের ধরে এনে প্রতিনিয়ত টর্চার করত। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই ধরে নিয়ে নির্যাতন করত। ইউনিয়নের প্রতিটি কেস, দরবার, হামলা মামলায় তাদের উপস্থিতি ছিল। তাদের হুকুম ছাড়া গ্রামের একটি পিপিলিকা ও নাকি এপার ওপার হত না বলে গ্রাম বাসির বিশ্বাস। অনেকে দীর্ঘ দিন কোন কথা না বললেও বর্তমানে মুখ খুলেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরই আত্মগোপনে চলে যায় তার পুরো পরিবার। জাবেদের ভাই মাইনুলের, (ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি) জাবেদের ছেলে রাজু (মেম্বার), জাবেদের ভাই জসীম (মেহের উত্তর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি)। কুখ্যাত মামলাবাজ মনিরুজ্জামান এর আলিশান বাড়ীগুলো পাহাড়া দেওয়ার জন্য রয়েছে ১০ জন পাহারাদার। আত্মগোপনে থাকলে ও প্রতিনিয়ত তাদের মোটর সাইকেল ক্যাডার বাহিনী এলাকায় মহড়া দিয়ে যাচ্ছে।
কদমতলী গ্রামের তাজুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, নুর হোসেন, খোকন, নয়নপুর গ্রামের সোহাগ, আনন্দপুর গ্রামের হারুনের ছেলে সহ মোট ১০ জন। তাদের প্রত্যেককেই দিতে হয় প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা করে। তাদের অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদেরকে একপ্রকার বাধ্য করা হয়েছে পাহারা দেওয়ার জন্য। জাবেদ ও তার ভাইয়েরা সব সময়ই ৪/৫ জন বডিগার্ড নিয়ে চলাফেরা করত। তাহাদের দূর্নীতি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও অদৃশ্য এক কারনে থানা প্রশাসন বা কেউই কখনও তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেনি। তাদের একটি ফোনেই থানা থেকে পুলিশ চলে আসত। জাবেদের বাড়ীতে থানা পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের আনাগোনা ও আপ্যায়ন সব সময়ই লেগে থাকত। ইউনিয়নে প্রভাব প্রতিপত্তির জন্য জাবেদ সব সময়ই পুলিশকে কাজে লাগাত। বিভিন্ন পদের খাবার দিয়ে আপ্যায়িত হত পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের। অনেক সৎ পুলিশ অফিসার তাদের কথা মত না চললে বান্দরবন, খাগড়াছড়ি পাঠাত বলে এলাকায় প্রচলন আছে।
গ্রামের একমাত্র শিক্ষক, কৃষি উদ্যেক্তা মরহুম ফজলুল হক মাষ্টারকে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে বলে চাঁদপুর প্রবাহ, দৈনিক ইলশেপাড়, চাঁদপুর কন্ঠ, চাঁদপুর নিউজ পত্রিকায় একাধিক বার সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাদের দূনীতি অত্যাচারের খবর বিভিন্ন পত্রিকায় বহুবার প্রচার করা হলে ও বার বার অদৃশ্য কারনে পার পেয়ে যায়। তাদের রাজকীয় বাড়ীগুলোতেও চলাচলের সরকারী রাস্তায় লাগানো রয়েছে প্রায় শতাধিক সিসি ক্যামেরা। অজ্ঞাত স্থান থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে সর্বক্ষণ। অনেকের ধারনা বাড়ি পাহারা দেওয়া হচ্ছে যাতে করে বাড়ির ভিতরের টর্চার সেলের পরিস্থিতি না জানা যায়। সেখানে কেউ আটক আছে কিনা তা গ্রামবাসি কেউ নিশ্চিত নয়।
জাবেদ হোসেনের মূল নাম বতু, বতু নামেই সবাই চিনত। ২০০৯ সালের পূর্বে একটি বাইসাইকেলে করে বাড়ী থেকে ২১ কিলোমিটার দুরে চিতোষী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে স্ট্রাম্প বিক্রি করত ভেন্ডার হিসাবে। ছিল একটি দোচালা টিনের ঘর। এখন যিনি মামলাবাজ, সন্ত্রাসীদের গড ফাদার, কুখ্যাত ভূমি দস্যু জাবেদ নামে পরিচিত। জাবেদের ভাই মাইনুল ছিল পকেট মার। লাকসাম চাঁদপুরের ট্রেনের মধ্যে লোকদের পকেট কেটে টাকা নিয়ে নিতো। বর্তমানে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক। পাশ্ববর্তী লক্ষীপুরে মেয়ের বাড়ীতে গড়ে তোলেন আলিশান বাড়ী। জসীম ছিল বখাটে মানুষের গাছের ডাব, সুপারী চুরি করে বিক্রি করাই তার পেশা ছিল। এরপরই জাবেদ হোসেন আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ দিয়ে নিজে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, তার ছোট ভাই মাইনূল ইসলাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, সর্বকনিষ্ঠ ছোট ভাই জসিম উদ্দিন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদ দখল করে নেন। জাবেদের ছেলে মাত্র ২০ বছর বয়সেই মেম্বারের পদটি দখল করে নেন।
বর্তমানে জাবেদ হোসেনের গ্রামের বাড়ীতে ৩ তলা রাজকীয় ভবন, জসিমের কোটি টাকা মূল্যের আলিশান বাড়ী, অপর ভাই মনিরুজ্জামানের আলীশান বাড়ী। মনিরুজ্জামানই সৌদি আরবের জেদ্দায় ও দুবাই এ স্বর্নের দোকান ও কলকাতার বড় বাজারের হোটেলের দেখভাল করেন। প্রায়ই দেশের বাহিরে চলে যান। জাবেদ বিয়ে করেন ৩টি, মনিরুজ্জামান ৩টি, মাইনুল ৫টি বিয়ে করেন। জাবেদ যদিও থানা পুলিশের সহযোগীতায় গ্রেফতার বানিজ্য ছাড়াও দখল দারিত্ব, ভূমি দস্যুতা করে গ্রামে ও পাশ্ববর্তি গ্রাম গুলোতে নামে বেনামে অর্জন করেছেন ২০০ বিঘা সম্পত্তি। তার ভাই মাইনুল ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি হওয়ার পর নিয়ন্ত্রন করেন মাদক সম্রাজ্য, অপর ভাই জসিম নিয়ন্ত্রন করেন ক্যাডার বাহিনী।
সরজমিনে তদন্ত করে আরো জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরই পালিয়ে যায় গোষ্টিটি। গ্রামে অনেকের ধারনা তারা পাশ্ববর্তি ভারত অথবা দুবাই তে পালিয়ে যেতে পারে। বিক্ষুদ্ধ নির্যাতিত জনতা তাদেরকে না পেয়ে মাইনুলের বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়।
জাবেদের উত্থান হয় ২০০৯ইং প্রথম উনকিলা গ্রামে বাবুল খন্দকার ও কদমতলী গ্রামে মরহুম ফজলূল হক মাষ্টারের ছেলে রেজাউলের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার মাধ্যমে। জাবেদের ভাই মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে মিথ্যা মামলাটি দাখিল করেন। মনিরুজ্জামান এলাকার প্রায় অর্ধ শতাধিক ম