আল-আমিন স্টাফ রিপোর্টার: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বুরুঙ্গা চেল্লাখালী নদী থেকে বালু উত্তোলনকারী মেশিন মালিক ব্যবসায়ীরা
চাঁদা না দেওয়ায় সন্ত্রাসী কায়দায় পুর্ব পরিকল্পিত সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
গত ২৮ আগস্ট ২০২৪, বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা ব্রিজের পূর্বপাড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরজমিন গেলে,প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বুরুঙ্গা ও পোড়াবাড়ি গ্রামের মোন্তাজ আলী, হামিদ মিয়া, মাজম আলী,ইউপি সদস্য নুর ইসলামসহ অন্যান্য বালু ব্যবসায়ীরা চেল্লাখালী নদী থেকে বালু উত্তোলন ব্যবসা করে আসছিল। ৫ আগস্ট ২০২৪ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর আধিপত্যেকে বিস্তার করে একই ইউনিয়নের আন্দারোপাড়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম, মমিন মিয়া, ইন্তাজ আলীসহ একটি সংঘবদ্ধ দলবল লাঠিসোঁটা নিয়ে বুরুঙ্গা পুড়াবাড়ি এলাকায় মেশিন মালিকদের নিকট অবৈধভাবে রয়েলটির চাঁদা আদায় করত। প্রতিটি বালু ভর্তি ট্রাকের জন্য তাদের চাঁদা দিতে হত ৮ হাজার টাকা। এভাবে কয়েক সপ্তাহ চলার পর চেল্লাখালী নদীর বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়নি বিষয়টি নিশ্চিত জানতে পেরে বুরুঙ্গার মেশিন মালিকেরা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করত।
ঘটনার আগের দিন মেশিন মালিক মোন্তাজ আলীর কাছ থেকেও তারা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান মোন্তাজ আলী। দ্বিতীয় দিন মোন্তাজ আলীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বুরুঙ্গা ব্রিজের পুর্ব পাড়ে গিয়ে শান্তি মোড় এয়াকায় মারধর করে তাকে রাস্তায় ফেলে রাখে। খবর পেয়ে মোন্তাজ আলীর পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা সেখানে গেলে তাদেরকেও মারধর করে পরপরই, সংঘর্ষে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় দুই পক্ষের মধ্যে পুনরায় আবারও সংঘর্ষ বাঁধলে বুরুঙ্গা পোড়াবাড়ির মোনতাজ আলীর পক্ষের ১০ জন এবং আন্দারোপাড়া গ্রামের আব্দুল আলী ও মমিন গংদের ৪ জনসহ প্রায় ১৪ জন আহত হন। এলাকাবাসী জানায়, সংঘর্ষের পর উভয় পক্ষের আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং সুস্থ হয়ে সবাই বাড়ি ফিরলেও আতঙ্ক কাটেনি বুরুঙ্গা গ্রামবাসীর।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় আন্দারোপাড়া গ্রামের প্রভাবশালী মমিন মিয়া বাদী হয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর ৪০ জনের বিরুদ্ধে এবং পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর আব্দুল আলী বাদী হয়ে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। দুটি মামলায় স্থানীয়সহ, উপজেলার নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার মোট ৮৭ জন নামীয় আসামির পাশাপাশি আরও ৯০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই এই সংঘর্ষের ঘটনাও জানেন না।
গ্রামবাসীরা জানায়, সংঘর্ষের পর চাঁদাবাজদের দেওয়া মিথ্যা মামলার ভয়ে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও তাদের দেওয়া হুমকিতে লোকজন রাত কিংবা দিনেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাওলানা মোঃ জামাল উদ্দিন, বলেন, "ওই সংঘর্ষের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এর ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। আমি উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছি এই ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সমাধান কামনা করছি। যাতে সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে এবং এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে।"
ঘটনার সততা নিশ্চিত করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভূইয়া জানান, দুইজন বাদী পৃথকভাবে দুটি মামলা দায়ের করেছে। এফআইআর হয়েছে বলেও জানান তিনি।