মোহাম্মদ দুদু মল্লিক,শেরপুর : শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সীমান্ত মডেল কলেজের সাবেক সভাপতি ও নলকুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমানের স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বাণিজ্য আর ক্ষমতার দাপটে কলেজটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও এমপি'র সাথে সখ্যতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোটা অংকের নিয়োগ বাণিজ্যে,পারিবারিক ভাবে বিভিন্ন পদে ভাই-বোন সহ ৯ জনকে নিয়োগ,জোরপূর্বক নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো.শাহিনুর ইসলামকে পদত্যাগের বাধ্য করিয়ে নেন অভিযোগ ওঠেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)এর দপ্তরে দায়ের করা অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সীমান্তবর্তী এলাকায় অনগ্রসর জাতির মাঝে উচ্চ শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণকে নিয়ে ভারুয়া গ্রামে সীমান্ত মডেল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফলশ্রুতিতে একি এলাকার মো. মজিবুর রহমান তার নামীয় এক একর জমি ৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কলেজের নামে লিখে দেয়। সেইসাথে তিনি ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পদ সহ ভাগিয়ে নেন এক ভাই ও এক বোনের চাকুরি সহ আরো একজন শিক্ষক। ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে তিনি সভাপতির পদে বহাল থেকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কলেজটিকে এমপিও ভুক্ত করার নাম দিয়ে এবং বিভিন্ন শিক্ষক কর্মচারিদের নিয়োগ বাবদ হাতিয়ে নেয় মোট ৪৫ লক্ষ টাকা। যাহা তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ভোগ করেন। সভাপতির এসব অনৈতিক বিষয়ে ওই কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহিনুর ইসলাম প্রতিবাদ করায় ২০২৩ সালের ২৫ জুন মো. শাহিনুর ইসলামকে উক্ত কলেজ থেকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেয়। এর আগে উক্ত কলেজের সকল নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষক ও কর্মচারীদের জিম্মি করে তাদেরকে চাকুরির হুমকি দিয়ে ২০২৩ সালের ২১জুন অধ্যক্ষ মো. শাহিনুর ইসলামের বিরুদ্ধে মনগড়া নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করে অনাস্থাপত্রে স্বাক্ষর নেয়। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে উপজেলা,জেলা ও ব্যানবেইজে পাঠানো ২০ জন শিক্ষক কর্মচারির নাম ও পদবী ঠিক থাকলেও ২০২৩ সালের ২৩ জন শিক্ষক কর্মচারির নাম বেনবেইজে পাঠানো হয়। এতে পূর্বের কর্মরত ৬ জন শিক্ষক কর্মচারীকে বাদ দিয়ে সভাপতির এক ভাই,এক বোন,মেয়ের জামাই,ঝিয়েরী, ঝিয়েরীর জামাই,পুত্রা ও ভাগিনা সহ ৯ জনকে যুক্ত করে শিক্ষক কর্মচারির বেইবেইজ জরিপে পাঠানো হয়। এতে পূর্বের নিয়োগকৃত ৬ জন শিক্ষক, কর্মচারীদের বাদ দিয়ে মোটা অংকের বাণিজ্য করে নিয়োগ প্রদান করে। এতে ফোঁসে ওঠে বঞ্চিত শিক্ষক ও কর্মচারীরা। এদিকে আত্মীয় করণের কারণে সভাপতির মেয়ের জামাই অফিস সহকারি সাজেদুল ইসলাম কলেজের কোন দ্বায়িত্ব পালন না করে গত প্রায় ৬/৭ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে চাকুরি করছে। আরেক মেয়ের জামাই মুক্তার হোসেন প্রধান অফিস সহকারি পদে থেকেও অফিস না করে ব্যক্তিগত ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। সভাপতির ছোট ভাই ও অফিস সহকারি আতিকুর রহমান প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে নিজ মুদি দোকান পরিচালনায় ব্যস্ত। সবমিলিয়ে সভাপতি মো. মজিবুর রহমানের সেচ্চাচারিতায় ও নিয়োগ বাণিজ্যের ফলে সীমান্ত মডেল কলেজটির একদিকে যেমন দাপ্তরিক কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অপরদিকে একি পারিবারিক ৯ জন আত্মীয় স্বজন নিয়োগ পাওয়াতে কলেজটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মজিবুর রহমান স্ব-পদে থাকার যোগ্যতা না থাকায় এবং তার সকল অপরাধ ঢেকে রাখার জন্যে একি কলেজের ছাত্রী এবং তার মেয়ে ফেরদৌসীকে গর্ভনিং বডির সভাপতি নির্বাচিত করে। কিন্তু বিধিবাম! গত ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ বাতিল করে। এতে ভেস্তে যায় সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমানের সকল স্বপ্ন।এদিকে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তাহার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে।অপরদিকে মুহাম্মদ শাহিনুর ইসলাম বলেন, "আমি ২০১৩ সালে অত্র কলেজ প্রতিষ্ঠা করি। সেসময় থেকেই অত্র কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে বিধিমোতাবেক দায়িত্ব পালন করে আসতেছিলাম। কিন্তু সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান দলীয প্রভাব খাটিয়ে তার নিকটতম আত্মীয় ও এনটিআরসি'র ভুয়া নিবন্ধনধারী মুন্নাছ আলীকে মোটা অংকের টাকার চুক্তিতে অধ্যক্ষ বানানোর আশ্বাস প্রদান করে ১৫ লক্ষ টাকা গ্রহন করে। সেইসাথে আমাকে উক্ত কলেজ থেকে বিধিবহির্ভূত ভাবে জোরপূর্বক পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেয়ার পাশাপাশি আমার নামে মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ভাবে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে মিথ্যাচার করে। যাহা পুরোটাই ছিলো তাহার সাজানো নাটক।ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং অত্র কলেজের সভাপতি মো. আশরাফুল আলম রাসেল এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়ার কথা সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।