তপন দাস, নীলফামারী
স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর মামলা দায়ের করে দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারী আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হওয়া নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির নেতা গোলাম রব্বানীর স্ত্রী শাহনাজ বেগমের। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরে নীলফামারী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আমলি আদালত ১ এ নীলফামারী ২ আসনের তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সরকারের সাবেক সংস্কৃতি বিষয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর কে প্রধান আসামি করে আওয়ামী লীগের ৪১ জন নেতা কর্মীর নাম উল্লেখ সহ তৎকালীন নীলফামারী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বাবুল আক্তার কে আসামি করে অঙ্গাত ১০০৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহত বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীর স্ত্রী শাহনাজ বেগম । দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন নীলফামারী ২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ সদস্য তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাবেক সংস্কৃতি বিষয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর , জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ , জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ , জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি মনিরুল হাসান শাহ আপেল সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকার , ৪নং পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম তালুকদার । মামলা সুত্রে এবং মামলার বাদি শাহনাজ বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায় ২০১৩ সালে ১৩ ডিসেম্বর নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে সাবেক সাংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়ি বহরে হামলায় আওয়ামী লীগের ৩ নেতা সহ ৫ জন মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির নেতা গোলাম রব্বানীর বাড়িতে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে যায় এবং বাসায় তাকে না পেয়ে বাসায় হামলা ভাংচুর অগ্নি সংযোগ এবং লুটপাট করে জালিয়ে দেয় এবং আমাকে ও আমার সন্তানদের হত্যার হুমকি দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীরা। এমতাবস্থায় আমার স্বামী প্রাণের ভয়ে পঞ্চগড় জেলায় আত্মগোপন করেন
এরপর ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কয়েকজন সন্ত্রাসী যুবক ডিবি পুলিশ এবং র্যাব পরিচয় দিয়ে পঞ্চগড়ে আত্মগোপনে থাকা গোলাম রব্বানী কে তুলে নিয়ে যায় , এরপর ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি সদর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের আনুমানিক ২ শত থেকে ৩ শত গজ উত্তরে নীলফামারী - ডোমার এশিয়ান হাইওয়ের সড়কের বালাপাড়া গোঁতামারী কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানের একটি বাঁশ ঝাড়ের পাশ থেকে গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখতে পেয়ে স্হানীয়রা সদর থানায় খবর দেয় তখন সদর থানা পুলিশ আমার স্বামীর লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় । তিনি আরো বলেন আমার স্বামীকে আত্মগোপনে থাকা বাসা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আমি নীলফামারী সদর থানা এবং র্যাব ১৩ রংপুর এ আমার স্বামীর বিষয়ে খোঁজ নিয়েছিলাম কিন্তু তারা আমায় কিছু জানায়নি যে আমার স্বামী কোথায় কিভাবে আছে। পরে ১৮ জানুয়ারি লোকমুখে জানতে পারি আমার স্বামীর গুলি বিদ্ধ লাশ গোঁতামারী মহাশ্মশানের পাশের একটি বাঁশ ঝাড় থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি আরো বলেন যে তার স্বামীকে হত্যার পর লাশ যখন পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় সেদিনেই আসাদুজ্জামান নূর এবং আওয়ামী লীগের নেতারা লক্ষীচাপ ইউনিয়নে আনন্দ মিছিল করে এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। এর পর থেকে আসামি অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে এবং আমার পরিবারের উপর শুরু করে চরম নির্যাতন , তাই নির্যাতন সইতে না পেরে আমি আমার ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ৬/৭ মাস আত্মগোপনে থাকি। এখন আমার এই তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে একটি দাবি আমার স্বামীর হত্যাকারী এবং আমার ছোট বাচ্চাদের তাদের বাবার আদর থেকে বঞ্চিতকারীদের যতো দ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানাই।