হৃদয় হাসান (স্টাফ রিপোর্টার)
দিন দিন যানজটের শহরে পরিনত হচ্ছে যশোর। এই যানজট সমস্যার সমাধানে না আছে যশোর পৌর কর্মকর্তাদের চোখ। না আছে ট্রাফিক পুলিশের। দিন দিন যানজট নয় যেন মেলা বসছে শহরের রিক্সা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ প্রাইভেট কারের। সেই সাথে আছে দুর্ভোগে পড়া মানুষও।
খোঁজ দিনে দেখা গেছে দেখা গেছে, যাদের হাতে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা, তারাই বিভিন্ন বাহন প্রতিষ্ঠানের মালিক; কেউ আবার মালিক-চালক সমিতির হোতা। শহর ঘুরে দেখা গেছে পৌর এলাকায় চলাচলরত লাইসেন্সকৃত ইজিবাইক কিংবা রিকশার সংখ্যা পৌরসভার হিসাবের থেকে অনেক অনেক বেশি। সেসব যানবহন বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে শহরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া, অনটেস্টের মোটরসাইকেল চলছে দেদারছে। ট্রাাফিক পুলিশের কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় মোটরসাইকেল আরোহীরাও মানছেন না কোনো নিয়ম কানুন। কিশোররাও এখন শহরের বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে অবস্থা আরও ভয়াভয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা যশোরবাসীর।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, যশোর শহরে বৈধ ইজিবাইক রয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। তার মধ্যে সাবেক মেয়র হায়দার গণি খান পলাশের সময়ে প্রায় এক হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
পৌরসভার দেয়া লাইসেন্স অনুযায়ী বৈধ রিকশা রয়েছে ২ হাজার ৯শ’ ৭৩টি। সাবেক মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ প্রায় ৯শ’টি লাইসেন্স দিয়েছেন। স্মার্ট রিকশা ২৪টির মধ্যে সদ্য সাবেক মেয়রের আমলে একটির নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভ্যান রয়েছে ২শ’ ৯৩টি। ৩৫টি মেয়র পলাশের আমলে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। পৌরসভার তথ্যমতে সবমিলিয়ে শহরে ৭ হাজার ৭শ’ ৬৮টি বৈধ যানবহন রয়েছে। কথা প্রসঙ্গে তিনি যানান দোকানের মালামাল ক্রয় বিক্রয় শহরের বড় বাজার এলাকা, ঘোপ এলাকা, বকুল তলা, মাইক পট্টি,চৌরাস্তা থেকে মনিহার পর্যন্ত সকল এলাকায় দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫ বার যানজট লেগে যায়। এর ফলে কার্যত শহরের ঢোকা বেরোনোর অবস্থা থাকে না। যদি মোটর সাইকেল নিয়ে বের হন তাহলে যাতায়াত সহজ হলেও মনে শান্তি নেই তার।
নিজের হতাশার কথা জানিয়ে শহরের ঘোপ কবরস্থান এলাকার কাজী জাফর বলেন, শেখ হাসিনার আমলে তার দোসররা গণ পরিবহন সহ যানবাহানের নানা সেক্টরে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে যা ইচ্ছা তাই করেছে। মালিক-চালক-শ্রমিক সমিতিগুলো সড়কের বারোটা বাজিয়েছে।পুরো সিস্টেমটাকে নষ্ট করে ফেলেছে।
দিনের বেলা দড়াটানা ব্রিজ এর পাশ থেকে, কাঠের পুল ব্রিজ এর পাশ থেকে থ্রী হুইলার, ইজিবাইকের যাত্রী ওঠানামা করানোর জন্য অবস্থানের কারনেও যানজট লেগে থেকে এই এলাকায়। আসে পাশে আছে শহরের প্রাই সব বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতালসহ ঔষধ, খাবারের দোকান। যে কারনে এখানে সবসময়ে জন সমাগম বেশি থাকে। এখানেই অবস্থিত যশোর ট্রাফিক পুলিশের অফিসটি। তারপরেও তাদের কোন দেখভাল নেই।
যশোরের সমাজকর্মী রিফাত হোসেন জানান বিগত সরকারের আমলে আওয়ামীলীগের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা প্রতিটি যানবাহনের সেক্টর দখল করে সন্ত্রাসীদের কাছে লিজ দেওয়ার মতো করে বিভিন্ন স্ট্যান্ড দিয়েছিল। এই সন্ত্রাসীরা দলবল নিয়ে নানা ভাবে শহরের দখল নিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে রেখেছিল কিন্তু বর্তমান সরকার আসার পরে একমাস পার হলেও যেন উদাসিনতা নিয়ে চলছে ট্রাফিক বিভাগসহ প্রশাসনের এই সংস্থাগুলি। তবে যশোরে নতুন ডিসি ও পুলিশ সুপার এসেছেন দায়িত্ব নিয়ে দেখা যাক এনারা কি করেন। পথচারীরা বলছেন ট্রাফিক বিভাগের লোকজন চরম উদাসিন। ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বরত সার্জেন্ট ও সদস্যরা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অল্প বয়সী ছেলেরা যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবে তাদের গাড়ি চালাচ্ছে।
অযথাই গাড়ি আড় করে দিয়ে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করছে। আমরা না পারছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, না পারছি আমাদের উপর মহলে অভিযোগ করতে। সকলে আমাদের ধৈর্য্য ধরতে বলছে। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যে সব কিছু ঠিক করে সামনের দিনগুলোয় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।যশোরে যানজটের কারণ ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব বাহনের কারণেও সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকগুলোর মনে মৃত্যুর ভয়ও নেই। তারা রাস্তার মাঝে থেমে যায়, উল্টোদিক থেকে এসে অচলাবস্থা তৈরি করে। ইজিবাইকগুলিও সেই অবস্থা শহরের মধ্যে যে ভাবে পারছে সেভাবে থামছে, মানতে চাচ্ছে না কোন নিয়ম কানুন। যশোর শহরের মধ্যে হাজার দশেক ব্যাটারিচালিত রিকসা, ইজিবাইক চলাচল করে। এসবের চালকরা খরিদ্দার ধরার জন্য প্রাই সময়ই সড়কের মাঝে অবস্থান করে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাস্তার মোড় দখল করে রাখে। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করে না। তিনি বলেন, এসব ঠিক করতে হলে আগে সাধারণ যাত্রীদের সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তার আহ্বান, দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে দেশের শহরের এ অবস্থা চলতেই থাকবে।
ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা আরো বলেন ,দেশের পট-পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। দ্রুতই এ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান বলেন, নির্দেশনা না আসায় তারা এখনো কোনো অভিযানে অংশ নেননি। ফলে মামলাও হচ্ছেনা। অনেকেই হয়তো এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে তিনি পৌর প্রশাসকের সাথে কথা বলেছেন। বৈধ যানবহনের প্রকৃত সংখ্যা তাদের কাছে নেই। পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে তা চাওয়া হয়েছে। দ্রুতই অভিযানে নামবেন বলে জানান।
যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, ইতিমধ্যে তারা যানজট নিরসনে কাজ শুরু করেছেন। বিভিন্ন বৈধ যানবহনের নির্দিষ্ট সংখ্যা তারা বের করছেন। তারা যশোর শহরে অবৈধ যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মাইকিং করছেন।
তাদের ফুটপাত উচ্ছেদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুতই তারা অবৈধ যানবাহন চলাচলে অভিযানে নামার আশ্বাস দেন তিনি।