বিশেষ প্রতিনিধি: এস এম তাজুল হাসান সাদ
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রোকেয়া মনসুর মহিলা কলেজে আহবায়ক কমিটির সভাপতি মনোনীত হয়েছেন কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক বস্ত্রমন্ত্রী মরহুম অ্যাডভোকেট এম মনসুর আলীর একমাত্র ছেলে এইচএম রহমাতুল্লাহ পলাশ।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির একাংশের আহবায়ক কুশুলিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ এবাদুল ইসলামের ছেলে শেখ নাজমুল হোসেন।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট এম মনসুর আলী ও তার সহধর্মিনী বেগম রোকেয়ার সুযোগ্য ছেলে এইচ এম রহমাতুল্লাহ পলাশ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মনোনীত হওয়ায় কলেজের উপাধ্যক্ষ শ্রীবাস চন্দ্র রায়সহ কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মচারী তকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কলেজের একাধিক শিক্ষক-কর্মচারি জানান, ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রোকেয়া মনসুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যোগদান করেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি একেএম জাফরুল আলম বাবু। তিনি কলেজে যোগদানের পর থেকে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট চালাতে থাকেন। অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারিদের সাথে চরম দুর্ব্যাবহার ও নানাভাবে প্রশাসনিক হয়রানি করেন অধ্যক্ষ একেএম জাফরুল আলম। দুর্নীতিবাজ ওই অধ্যক্ষের কর্মকান্ডে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রোকেয়া মনসুর মহিলা কলেজের পূর্বের সুনাম ধীরে ধীরে ক্ষুন্ন হতে থাকে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ১৭ আগস্ট পর্যন্ত একটানা কলেজে অনুপস্থিত থাকার পর জাফরুল আলম বাবু ১৮ আগস্ট হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য কলেজে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। এরপর থেকে আবারও লাগাতার অনুপস্থিত থাকেন তিনি। এরমধ্যে আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা ও জাফরুল আলম বাবুর সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮ জন শিক্ষক-কর্মচারির লিখিত স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তিনি প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানাজানি হলে দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারী অধ্যক্ষের পদত্যাগের একদফা দাবিতে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারি, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্ররা সম্মিলিতভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন। শিক্ষক-কর্মচারিরা আরও জানন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সকল শিক্ষক-কর্মচারিদের গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কলেজে উপস্থিত থাকার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু নির্দেশনা অমান্য করে স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ জাফরুল আলম বাবু কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। একপর্যায়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে তিনি কলেজে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে কিছুক্ষণ পর চলে যান।
এরপর থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (২৫ সেপ্টেম্বর) তিনি একটানা অনুপস্থিত রয়েছেন। নবগঠিত এই পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এইচ এম রহমাতুল্লাহ এর নেতৃত্বে নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদ স্বৈরাচার ও দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ একেএম জাফরুল আলম বাবুকে স্থায়ীভাবে অপসারণপূর্বক একজন সৎ ও দায়িত্বশীল অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীরা।