মো: তানজিম হোসাইন, শিক্ষক
৫ই অঅক্টোবর, শিক্ষক দিবস। প্রতি বছর ঘটা করে এই দিনটি পালিত হয়। বড় বড় বক্তব্য, মঞ্চে ফুলের বন্যা, কিন্তু যাঁরা সত্যিকারের সম্মান পাওয়ার যোগ্য—তাঁদের জীবন পাল্টায় না। শিক্ষকদের জন্য যখন ন্যূনতম মর্যাদা, বেঁচে থাকার মতো বেতন, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় না, তখন এই দিবস পালন আসলে কিসের? একদিকে রাষ্ট্র শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, আর অন্যদিকে তাঁদের দিয়ে দিবস পালনের নামে কৃত্রিম শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। এটা কি শিক্ষকদের প্রতি নির্মম তামাশা নয়?
শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন বহুদিন ধরে চলছে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়—সবখানেই শিক্ষকদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অসন্তোষ আছে। কিন্তু সরকার কতটুকু মনোযোগ দিয়েছে? শিক্ষকদের উন্নয়নে বাস্তব পদক্ষেপের চেয়ে বড় বড় কথার ফুলঝুরি বেশি শোনা যায়। শিক্ষক দিবসে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানোর চেষ্টা হয়, অথচ শিক্ষকদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসে না। তাঁদের জন্য কোনো স্থায়ী আর্থিক নিরাপত্তা, চিকিৎসা সেবা, বা চাকরির নিশ্চয়তা নেই। এমন অবস্থায় শুধু একদিনের উৎসব আয়োজন করে তাঁদের কীভাবে সম্মান জানানো সম্ভব?
বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তাঁরা মাস শেষে যে সামান্য বেতন পান, তা দিয়ে পরিবার চালানো তো দূরের কথা, নিজের মৌলিক চাহিদাগুলোও পূরণ করতে পারেন না। যে মানুষটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছেন, তিনি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। এই বৈষম্যের মধ্যে পড়ে তাঁদের কাছ থেকে কীভাবে শিক্ষার মানোন্নয়ন আশা করা যায়? তাঁদের কষ্টের গল্প শুনতে কেউ রাজি নয়, কিন্তু শিক্ষক দিবসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁদের সম্মান দেখানোর ভান চলে। এটা কি সত্যিকার সম্মান, নাকি নিছক লোক দেখানো প্রহসন?
প্রশ্ন হল, কেন শিক্ষকদের এই দুর্দশা দেখতে হয়? কেন তাঁদের প্রতি এই অবহেলা? যাঁরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলেন, তাঁদের কি নিজেদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই? একজন শিক্ষক যখন বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছেন, তখন তাঁর কাছ থেকে আমরা কীভাবে শিক্ষার মানোন্নয়ন আশা করতে পারি? শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির কথা বলা হলে, শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ছাড়া সেই উন্নয়ন কি সম্ভব? যে জাতি শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে ব্যর্থ, সেই জাতি কীভাবে শিক্ষায় অগ্রগামী হতে পারে?
শিক্ষক দিবসের প্রকৃত সম্মান দেখাতে হলে তাঁদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত না হলে, তাঁদের প্রকৃত সম্মান না দিলে, শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই উন্নত হবে না। শিক্ষক দিবস যেন শুধু লোক দেখানোর উত্সব না হয়, বরং শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার দিন হয়ে উঠুক। তাঁদের বেঁচে থাকার অর্থ এবং সম্মান না দিলে একদিন এই জাতি তার ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগরদের হারিয়ে ফেলবে।
রাষ্ট্র জেগে উঠুক!
মো: তানজিম হোসাইন
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক,
বৈষম্যবিরোধী সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ।