বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি-
বরিশালের বাকেরগঞ্জে অটো গাড়ির ব্যাটারী চুরির সালিশী মীমাংসার নামে ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতার লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বোয়ালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত এক মাস পূর্বে উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বোয়ালিয়া গ্রামের শাহজাহান হাওলাদারের নিজ বাড়ির সামনে থেকে তার অটো গাড়ির ৪টি ব্যাটারি চুরি হয়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে তিনি শাওন ও সাইদুল নামের দুজনকে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় একই গ্রামের মিল্লাত হাওলাদার ও নাঈম হাওলাদার নামের আরো দুজন তাদের সাথে ব্যাটারি চুরির ঘটনায় জড়িত। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক বরিশালের একটি দোকান থেকে চুরি যাওয়া ৪টি ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় গত কয়েকদিন আগে রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন বিএনপি'র আহবায়ক কমিটির সদস্য জসিম ডাকুয়া, তার ভাই জুয়েল ডাকুয়া, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য শামিম তালুকদার ব্যাটারি চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজন মিল্লাত হাওলাদারের বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসায়। বৈঠকে স্থানীয় সিরাজ হাওলাদার ও অটো চালক জসিম মোল্লা জানান, বিগত দুই মাস পূর্বে তাদের গাড়ির ব্যাটারিও চুরি হয়েছিল। এজন্য তারা শাহজাহান হাওলাদারের ব্যাটারী চুরির ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে সন্দেহ করেন। সালিশ বৈঠকে বিএনপি নেতা জসিম ডাকুয়া ও যুবদল নেতা শামিম তালুকদার চোর সন্দেহকারী ৪ জনকে মিল্লাত হাওলাদার, নাইম হাওলাদার, শাওন হাওলাদার ও সাইদুল হাওলাদার প্রত্যেককে কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা করে মোট ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার জরিমানা আদায় করেন। জরিমানার টাকা থেকে তিনি সিরাজ হাওলাদারকে ৩৫ হাজার ও জসিম মোল্লাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা তারা আত্মসাৎ করেন।
ব্যাটারি চুরি হয়ে যাওয়া অটোচালক শাহজাহান হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তার ব্যাটারি চুরিকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা জসিম ডাকুয়া ও যুবদল নেতা শামীম তালুকদার ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করে তাকে এক টাকাও দেয়নি। উল্টো তার চুরি যাওয়া ব্যাটারি উদ্ধারের জন্য তার নিকট ১৫ হাজার টাকা দাবি করে।
দুলাল হাওলাদার জানান, তার ভাইয়ের ছেলে মিল্লাতকে ব্যাটারী চোর আখ্যা দিয়ে সালিশ বৈঠকের নামে তাদের নিকট থেকে জসিম ডাকুয়া নগদ ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। ওই টাকা তারা কি করেছেন তা তিনি জানেন না।
নাইম হাওলাদারের মা কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, তার অন্ধ স্বামী নূর মোহাম্মদ হাওলাদার বিছানায় শয্যাশায়ী মৃত্যু পথযাত্রী। তার ছোট ছেলে নাইম অটো গাড়ি চালিয়ে ৮ জনের পরিবারের ভরনপোষণ চালাতো। শাহজাহানের চুরি হয়ে যাওয়া ব্যাটারী তার ছেলের গাড়িতে বরিশালে নিয়েছে এ অজুহাত দেখিয়ে জসিম ডাকুয়া তার পুত্রের নিকট ৪৫ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় ১৫ দিন তাদের অটো গাড়িটি আটকে রাখা হয়। অবশেষে জসিম ডাকুয়ার দাবিকৃত ৪৫ হাজার টাকা দেয়ার জন্য তার পুত্রের অটো গাড়িটি কম দামে বিক্রি করে দিতে তারা বাধ্য হয়েছেন। এখন তার ছেলে বেকার হয়ে ঘরে বসে রয়েছে।
স্থানীয় সিরাজ হাওলাদার জানান, এ ব্যাটারি চুরির কিছুদিন পূর্বে তার অটো গাড়ির ব্যাটারি ও চার্জার চুরি হয়েছিল। এজন্য জরিমানার ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা থেকে তাকে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা জসিম ডাকুয়া কি করেছে তা তিনি জানেন না।
ব্যাটারী চুরি যাওয়া অটো চালক জসিম মোল্লা জানায়, নতুন একসেট ব্যাটারির মূল্য ৭৯ হাজার টাকা। সালিশদাতা
জসিম ডাকুয়া তাকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
অভিযুক্ত সালিশদার মোঃ জসিম ডাকুয়া নিজেকে রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন বিএনপির নবগঠিত আহবায়ক কমিটির সদস্য ও ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দাবি করে বলেন, অটো গাড়ির ব্যাটারি চুরির ঘটনায় সালিশিতে তিনিসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তিনি কোন টাকা নেননি বলে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নাছির হাওলাদার বলেন, রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য জসিম ডাকুয়ার বিরুদ্ধে আপনাদের নিকট থেকে অভিযোগ শুনলাম। তদন্ত করে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।