মেহেরুল ইসলাম মোহন নাটোর জেলা প্রতিনিধি
দুই হাত নেই। ডান পা নেই, বাম পা রয়েছে, তাও আবার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ছোট। পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম রেখে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অদম্য সেই প্রতিবন্ধী রাসেল মৃধা পাশ করেছে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে এ বছর আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ৩.২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সেই রাসেল।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মাওলানা মোতাররফ হোসেন বিষয়টি সংবাদ কর্মীদের নিশ্চিত করেছেন।
রাসেল মৃধা সিংড়া পৌর শহরের শোলাকুড়া মহল্লার দিনমজুর আব্দুর রহিম মৃধার ছেলে বলে জানা গেছে।
মানব জনম বড়ই বিচিত্র। বৈচিত্রতায় এর রীতিনীতি। কারও জন্ম রাজার রাজ প্রাসাদে সোনার চামুচ মুখে নিয়ে। পৈত্রিক সুত্রেও যা পায় তা সাত পুরুষ বসে খেলেও ফুরায় না।আবার কারও জন্ম দুঃখীর শীর্ন কুঠিরে বুক ভরা ব্যথা নিয়ে পৈত্রিক সুত্রে পায় উপেনের ন্যায় মরিবার মত ঠাই নিয়ে। প্রিয়ার সমাধীতে তাজ মহল রচিতে, কার না, সাধ জাগে কিন্তু সাধ্য কোথায় ?তেমনি রাসেলের পরিবারেরও সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নাই।দিন মজুর-হত দরিদ্র পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত শত অভাব-অনটনের মাঝেও প্রতিবন্ধী রাসেলের পড়াশোনার প্রতি আলাদা স্পৃহা দেখে তার দরিদ্র বাবা-মা হাল ছাড়েননি।রাসেল এর আগে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও দাখিল পরিক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়।
অনুভূতি জানতে রাসেল মৃধার সাথে কথা হলে তিনি সংবাদ কর্মীদের বলেন, আলিম পাশ করায় আমি খুব আনন্দিত।আমার লেখাপড়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান মা-বাবার। তাদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে চাই।
রাসেল মৃধার বাবা আব্দুর রহিম মৃধা বলেন,লেখাপড়ার প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে দিনমজুরি করেও পড়াশোনা করাচ্ছি। লেখাপড়া শিখে ছেলে একদিন আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। তার ফলাফলে আমরা খুবই আনন্দিত। কষ্ট করে হলেও ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। সরকারের কাছে একটাই দাবি,লেখাপড়া শেষে রাসেলকে একটি সরকারি চাকরি দিয়ে যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোতাররফ হোসেন সংবাদ কর্মীদের বলেন, রাসেল মৃধা এ বছর আমার প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। বিগত পরীক্ষাগুলোতেও সে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছে।
রাসেল মৃধা পড়াশোনা শেষে যেন প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে সেজন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন এই অধ্যক্ষ।