মেহেদী হাসানঃ স্টাফ রিপোর্টার পটুয়াখালী
পটুয়াখালীর বদরপুরে ৯৪ বছরের প্রাচীন মসজিদ সংস্কারের পর উদ্বোধন ঐতিহ্যবাহী দা’ওয়াতুল ইসলাম বদরপুর দরবার শরীফ জামে মসজিদ। ৯৪ বছর পুরোনো এই মসজিদটি সংস্কারের জন্য ২০২৪ সালে কাজ ধরা হয় কিন্তু নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে সংস্কারকাজ শেষ হয়নি।
বদরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ‘মসজিদের সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০২৪ সালের মার্চে। এটি শেষ হতে ৩ মাস সময় লাগার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে সংস্কারের সময় তিন মাস বাড়ানো হয়। এখন সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে এবং নামাজের জন্য মসজিদটি আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে।’
৯৪ বছর আগে মসজিদটির যে মেরহাব, মিম্বর ও গম্বুজ তৈরি করা হয়েছিল সেগুলো এখনও আছে। বিশেষজ্ঞরা মসজিদটির কাঠের তৈরি ছাদ, দুর্বল হয়ে যাওয়া দেওয়াল, মসজিদটির ওঠানের মেঝে এবং বিশ্রামের জায়গাটি খুব সতর্কতার সঙ্গে সংস্কার করেছেন।
মসজিদটি প্রায় ৯৪ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে ১৯৩০ সালে বদরপুর দরবার শরীফের দাদা হুজুর পীর কেবলা কুতুবে বাঙ্গাল, আওলাদে রাসূল (দ.) পীর হযরত শাহ্ সাইয়্যেদ উসমান গনি বদরপুরী (রহঃ) নির্মাণ করেছিলেন।
নির্মাণের সময় মসজিদটি পাকা করা ছিলোনা কিন্তু পরবর্তীতে কুতুবে বাঙ্গালের যোগ্য সন্তান নবী বংশের ৩৬ তম আওলাদ, অলিয়ে কামেল, মুফতিয়ে আজম, হযরত শাহ্ সাইয়্যেদ আব্দুর রব চিশতী প্রকাশ গাউসে বদরপুরী (রহঃ) উনার নিজ খরচে মসজিদটি পুরাপুরি পাকা করে সংস্কার করে নির্মাণ করেন এবং মসজিদের পাশেই বিশাল ৫তলা মাদ্রাসা ও এতিমখানা নির্মাণ করেন।
উনার সপ্ন ছিলো এই দরবারে বিশাল মসজিদ কমপ্লেক্স করা কিন্তু প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের বিশাল মসজিদের প্লান করে রাখলেও এখন কাজে হাত দেওয়া হয়নি।
দ্বিতীয় বার পাকাপাকি সংস্কারের বহুদিন পর সেই পুরাতন মসজিদটি আবারো আধুনিক রূপে সংস্কারের প্রয়োজন হয় কিন্তু বহুদিন পার হলেও কেউ সংস্কার করতে পারেনি। আলহামদুলিল্লাহ দীর্ঘদিন পরে ২০২৪ সালের মার্চের দিকে গাউসে বদরপুরী (রহঃ) এর যোগ্য সন্তান ও দরবার শরীফের মেঝ পীর সাহেব কেবলা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, আল্লামা মুফতি ড. শাহ্ সাইয়্যেদ মুতাওয়াক্কিল বিল্লাহ রব্বানী বদরপুরী (শাহ্ সাহেব হুজুর) মসজিদ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন কিন্তু তিন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ৭ মাস লেগে যায়। উক্ত মসজিদের নির্মাণ কাজের জন্য উল্লেখযোগ্য শ্রম দিয়েছেন দরবার শরীফের খাদেম ও ভক্ত/মুরিদ হাজী খান বাহাদুর ও হাজী আব্দুল মান্নান আখন্দ এবং মসজিদের জন্য নতুন কার্পেট দিয়েছেন দরবার শরীফের খাদেম ও মুরিদ বিশিষ্ট শিল্পপতি হাজী আব্দুস সালাম হিরন মিয়া ইত্যাদি নানা ধরনের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই মসজিদটি নির্মাণের জন্য কাজ করছেন।
মসজিদের দেয়াল ইসলামিক মোটিফে সজ্জিত কারুকাজগুলো কাঠের খোদাইয়ের মাঝে অংকিত। এই নকশার গুণগত মান বিবেচনায় মসজিদের সংস্কারে বিশেষ স্থাপত্য শৈলী রীতি অনুসরণ করতে হয়েছে। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাকধানে কাঠের ছাদ, দুর্বল দেয়াল, মেঝে এবং টয়লেট এলাকা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে।
উদ্ভাবনী জুম্মার খুতবায় দরবার শরীফের সেঝ পীর সাহেব কেবলা আল্লামা সাইয়্যেদ আরিফ বিল্লাহ রব্বানী নওয়া হুজুর কেবলা বলেন, আমরা চেয়েছি, মসজিদের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্যগুলোসহ প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করতে। কেননা, এটি একটি অনন্য স্থাপত্য, যা অন্য শিল্পকর্মের মতো নয়।