শাহিন হাওলাদার /
নিজস্ব সংবাদদাতা,
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পায়রা, তুলাতলী, পান্ডব, কারখানা,বিষখালী, তেতুলিয়া নদীতে অবাধে ইলিশ ধরছেন অসাধু জেলেরা। উপজেলায় প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশের অভিযান সত্ত্বেও জেলেরা এই অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইলিশ মাছ শিকারের পর সেই ইলিশ নদীর তীরবর্তী এলাকার বাড়ির মধ্যে বাজার বসিয়ে কখনো নদীর পাড়েই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন দেশের বিভিন্ন নদ–নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময়ে ইলিশ বিক্রি, মজুত ও বাজারজাতকরণও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন নদীর অংশে নিয়মিত মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশের অভিযান পরিচালনা করছে। আভিযানিক দল সরে গেলেই জেলেরা দল বেঁধে নদীতে নেমে ধরছেন মাছ।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, দুর্গপাশা ইউনিয়নের তেতুলিয়া নদীতে, ফরিদপুর ইউনিয়নের কারখানা নদীতে, দুধল ইউনিয়নের কারখানা নদীতে, কবাই ইউনিয়নের কারখানা নদীতে, নলুয়া ইউনিয়নে কারখানা নদীতে, কলসকাঠী ইউনিয়নের পান্ডব ও পায়রা নদীতে, ভরপাশা ইউনিয়নের পায়রা নদীতে,নিয়ামতি ইউনিয়নের বিষখালী নদীতে সবচেয়ে বেশি ইলিশ শিকার করে আসছে জেলেরা।
২৫ অক্টোবর (শুক্রবার) কলসকাঠী ও ভরপাশা ইউনিয়নের ঘুরে দেখা যায়, কলসকাঠি ইউনিয়নের দক্ষিণ সাদিস গ্রামে পান্ডব নদীতে ও ভরপাশা ইউনিয়নের দুধলমৌ গ্রামে পায়রা নদীতে শত শত জেলেরা নদীতে ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে অবাধে ইলিশ শিকার করছে। দূর থেকে আভিযানিক দলের ট্রলার দেখলেই জেলেদের দ্রুতগামী ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে নদীর সাথে সংযোগ খাল গুলোর মধ্যে ঢুকে যায়। অভিযানিক দল সরে গেলেই আবার তারা নদীতে ইলিশ ধরা শুরু করে। অভিযানিক দলের ট্রলারের চেয়ে জেলেদের ইঞ্জিন চালিত নৌকা দ্রুতগতি হওয়ায় তাদেরকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না অভিযান দলের।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানকালে বাড়তি লাভের আশায় সক্রিয় হয়ে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন নদীর পাড় থেকে তাঁরা ইলিশ কিনে গ্রাম গ্রামে ঘুরে বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ মোবাইল ফোনে অর্ডার নিয়ে বাসায় পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছেন।
উপজেলা শহরের পার্শ্ববর্তী ভরপাশা ইউনিয়নের পায়রা নদীতে প্রতিদিন দেখা যায়, নদীতে জোয়ার আসলেই ৪০-৫০ টি জেলে নৌকা। প্রতিটি নৌকায় ৩-৪ জন জেলে রয়েছেন। নদীর পাশে খালে বেশ কিছু নৌকা দেখা যায়। মাছ শিকার শেষে জেলেরা খালে আশ্রয় নিয়ে ইলিশ মাছ বাড়ির মধ্যে পাঠিয়ে দিচ্ছে। জেলেরা আবার নৌকা নিয়ে ছুটছেন নদীতে।
ভরপাশা এলাকার জেলে বারেক বলেন, ৪০-৫০ টি নৌকা দিয়ে এখানে মাছ ধরা হয়। প্রতিটি নৌকায় ৫ থেকে ১০ কেজি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সে হিসাবে প্রতিদিন ভরপাশা এলাকায় প্রায় ১০ মণের মতো ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে। ছোট আকারে ইলিশের কেজি ৫০০ টাকা ৩ টি ইলিশে এক কেজি মাছের দাম ৭০০ টাকা, ২ টি ইলিশে কেজি ১ হাজার টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, জনবল, নৌযান–সংকট ও অর্থ বরাদ্দ কম থাকায় সব সময় নদীতে অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। তবে ইলিশ ধরা বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।