মো: তানজিম হোসাইন, শিক্ষক ও সাংবাদিক
পৃথিবীতে যা কিছু প্রভাবশালী, তার অনেকটাই জুড়ে আছে আমেরিকা। বিশ্বের অর্থনীতি থেকে শুরু করে রাজনীতি, বিজ্ঞান থেকে প্রযুক্তি—সবখানেই ছায়া ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ। আর সেই শক্তিশালী দেশের সর্বোচ্চ পদে আবারও ফিরলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতি ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে। ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম্প বিচে দাঁড়িয়ে বিজয়ী ভাষণে ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তার দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন নীতির খোলনলচে বদলে যেতে পারে।
যুদ্ধ ও অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউক্রেন যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে থামানোর, তবে গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের জন্য আশার আলো কম। একইসঙ্গে, তার কঠোর অভিবাসন নীতির ফলে অবৈধ অভিবাসীদের ওপর আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সীমান্ত সুরক্ষায় কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত বহন করে।
ন্যাটো ও ইউরোপের সঙ্গে টানাপোড়েন
ন্যাটো জোটের উপর মার্কিন অর্থায়ন কমানো বা জোটের অন্য সদস্যদের অর্থায়ন বাড়ানোর চাপ দিয়ে ট্রাম্প এই সামরিক জোটে পরিবর্তন আনতে পারেন। ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক ও বাণিজ্য সম্পর্কেও অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।
চীন ও ভারতের বাণিজ্যে অস্বস্তি
ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির আওতায় বাণিজ্যে চীন ও ভারতের জন্য কঠোর শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে। চীন তাইওয়ান ইস্যুতে খানিকটা স্বস্তি পেলেও শুল্কযুদ্ধের ঝুঁকি আবার সামনে আসতে পারে। একইসঙ্গে, ভারতের জন্যও বাড়তি শুল্ক এবং শ্রমবাজারে ভারতীয়দের সুযোগ সংকুচিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে অনিশ্চয়তা ও জলবায়ু নীতিতে পরিবর্তন
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নতুন উত্তেজনা উসকে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। আর জলবায়ু তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের আগের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে পরিবেশ সুরক্ষা নীতিতে পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণ তৈরি করতে পারে। তার কড়া অভিবাসন নীতি, যুদ্ধ থামানোর ঘোষণা, ন্যাটো ও বাণিজ্যে কৌশলগত অবস্থান শুধু আমেরিকার অভ্যন্তরেই নয়, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেবে প্রভাবের ঢেউ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার যেকোনো সিদ্ধান্তই এখন প্রতিটি মহাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, এবং কূটনীতির কৌশল বদলে দিতে পারে। বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে—ট্রাম্পের দ্বিতীয় অধ্যায় কি সত্যিই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বয়ে আনবে, নাকি এই সংকটময় সময়কে আরও কঠিন করে তুলবে? বিশ্ব কি প্রস্তুত?