মোস্তাক আহমেদ (বাবু) রংপুর।
৫ই আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়া ইউপি,চেয়ারম্যান পরিষদের তালা ভেঙে প্রবেশ করায়। স্থানীয় সাধারণ মানুষের হাতে ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যান।
ঘটনাটি ঘটেছেঃ- রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ৪নং অন্নদা-নগর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান,মোঃ আমিনুল ইসলাম আওয়ামী লীগ পন্থী হওয়ায়।গত তিন মাস পলাতক থাকার পর। তিনি ১১/১১/২০২৪ইং রোজ সোমবার সকাল আনুমানিক ৮,৩০ঘটিকায় ইউনিয়ন পরিষদে এসে অফিসে তালা ভেঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছিড়ে ফেলেন।স্থানীয় সাধারণ মানুষ লাঠি সোঠা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দিকে অগ্রসর হলে। তিনি এবং তার সহযোগিরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আবারো পালিয়ে যায়। কিছু ক্ষণ পর,পীরগাছা থানা পুলিশ খবর পেয়ে এসে,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন। ফলে কোন ধরনের স্বয়ংস ঘটনা ঘটেনি।
৫ই আগস্টের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের এক হাজার ৪১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার (সদস্য) গাঢাকা দিয়েছেন। এঁরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান-মেম্বার।জনপ্রতিনিধি না থাকায়,সেবাপ্রার্থী মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ৩৬৩টি ইউনিয়ন পরিষদে। প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে স্থানীয় সরকার। আর এক হাজার ৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যম কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে দেশের মোট চার হাজার ৫৮০টি ইউনিয় -নের মধ্যে,কতটিতে বর্তমানে চেয়ারম্যান-মেম্বার অনুপস্থিত রয়েছেন। তার তথ্য চেয়ে গত ৬ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদে -র (ডিসি) চিঠি পাঠিয়েছে,স্থানীয় সরকার বিভাগ। ডিসিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী,সরকার পতনের পর,দেশের এক হাজার ৪১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার- ম্যানরা অনুস্থি- ত রয়েছেন। যা মোট ইউনিয়ন পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ। এই চেয়ারম্যানদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে, হত্যা মামলা করা হয়েছে। এঁদের প্রত্যেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কের পাশাপাশি নিজে -দের ওপর হামলা হওয়ার আশঙ্কায় কার্যালয়ে যাচ্ছে না। অন্য তিন হাজার ১৬৪ জন চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করছেন।
তবে কতসংখ্যক ইউপি সদস্য (মেম্বার) অনুপস্থিত রয়েছেন সেই তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টির অগ্রগতি সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বলেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন,প্রতিনিধিরা নিরুদ্দেশ হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বাররাও গাঢাকা দিয়েছেন। যেখানে ১০ থেকে ১২ জন থাকার কথা,সেখানে হয়তো দু-তিনজন আছেন। এতে জনগণ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
’
উল্লেখো যে ঃ- নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান,ইউনিয়ন পরিষদের জন প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির হার কম হলে প্রশাসক নিয়োগ না করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে ডিসিদের পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে,এই সংখ্যা মোটেও কম নয়। প্রায় দেড় হাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান,অফিস কর - ছেন না। আবার এত ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার মতো কর্মকর্তাও নেই। ফলে যেসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত,কিন্তু বেশির ভাগ মেম্বার উপস্থিত সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর যেসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি বেশির ভাগ মেম্বারও অনুপস্থিত সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ’ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এতে বলা হয়,সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে দেশে কিছু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বর্তমানে ধারাবাহিক ভাবে,কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। এর ফলে ইউনিয়ন পরিষদের জনসেবাসহ সাধারণ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।উদ্ভূত অসুবিধাগুলো দূর করতে দুটি আদেশ জারি করা হলো :এর একটি হলো অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের কাজ পরিচালনা। এবং জনসেবা অব্যাহত রাখতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন,২০০৯-এর ধারা ৩৩, ১০১ ও ১০২ অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন। অন্যটি হলো প্যানেল চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অথবা যেকোনো জটিলতা দেখা দিলে। বর্ণিত আইনের ধারা ১০১ ও ১০২ প্রয়োগ করে,বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে তাঁর অধীন কর্মকর্তা যেমন—উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সচল রেখে জনসেবা অব্যাহত রাখবেন।এই আদেশ জারির ফলে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান না থাকলেও তাঁদের অনুপস্থি- তিতে সরকারের নিয়োগ করা প্রশাসক ও প্যানেল চেয়ারম্যা --নদের কাজ করতে আর কোনো সমস্যা রইল না।
এ বিষয়ে ঃ ৪নং অন্নদা-নগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ আকবর আলী মেম্বার,গণমাধ্যম-কে জানিয়েছেন। সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুল ইসলাম জোরপূর্বক ইউনিয়ন পরিষদের তালা ভেঙে অনুপ্রবেশে করায়। প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছিড়ে ফেলায়,আইনি প্রক্রিয়া নেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।