কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় হাতিয়া ভবেশ, বালু মহলে রথ বদল, এমনই কিছু তথ্য উঠে আসে কয়েকজন সাংবাদিক এর যৌথ অনুসন্ধানে ।
এ অনুসন্ধানের সূচনা হয় হাতিয়া অনন্তপুর টু উলিপুর, সবু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত, রাস্তা সংস্কার কাজের অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে । অভিযোগ উঠে যে হাতিয়া অনন্তপুর উলিপুর সবুমিয়ার বাড়ি পর্যন্ত, রাস্তা সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে । ২২-২৩ অর্থবছরে জাইকা প্রকল্পের এই কাজটি পায় হামিদ কনস্ট্রাকশন । গত একমাস আগে অনন্তপুর টু উলিপুর এই রাস্তাটির সংস্কার কাজ শেষ হয়, কাজ শেষের এক মাস হতে না হতেই শুরু হয়েছে রাস্তাটির পুনরায় রিপেয়ারিং ।
ধরেছে বিভিন্ন জায়গায় ফাটল, কোথাও উঠে গেছে কার্পেটিং এমনটি জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সরে জমিনে অনুসন্ধানে গেলে এ রাস্তাটি সংস্থার কাজে যে অনিয়ম হয়েছে তা সত্যতা পাওয়া যায়, রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ফাটলের চিহ্ন, জায়গায় জায়গায় উঠে যাওয়া কার্পেটিং আর রিপেয়ারিং চিহ্ন ।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমারের সাথে কথা বলতে, মোবাইল ফোনে একাধিক কল দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে উলিপুর উপজেলায় এলজিইডির একজন কর্মকর্তা হান্নান বলেন, যে রাস্তা সংস্কার কাজ শেষ হবার পর আবার কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা নষ্ট হয়েছে খারাপ হয়েছে জানি, কিন্তু আমাদের কিছুই করবার নেই । কারণ জানতে চাইলে তিনি স্থানীয় জনগণকে জনগণের অসচেতনতাকে দায়ী করে বলেন, রাস্তার উপর দিয়ে ডাম্পার ট্রাক ট্রাক্টর ৬ চাকা ৮ চাকার অতি ভারী যানবাহন চলাচলেই রাস্তা নষ্টের কারণ, স্থানীয় জনগণের সদিচ্ছা করলে এটি নিয়ন্ত্রণ করে রাস্তার নিরাপত্তা সংরক্ষণ করতে পারেন । ওই কর্মকর্তার মন্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকগণ আবারও অনুসন্ধানে যায় উলিপুর হাতিয়া অনন্তপুর রাস্তা পর্যবেক্ষণে। যাওয়া হয় হাতিয়া অনন্তপুর বিভিন্ন বালু মহলে, দেখা যায় ট্রাক্টরে করে চলছে বালু বিক্রয়, বালু বিক্রয় হচ্ছে, ট্রাক্টর প্রতি এক হাজার টাকায়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বালু বিক্রয় । রাত ৮ টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চলাচল করে ডাম্পার ট্রাক । এমনটি বলেন হাতিয়া ভবেশ বালু মহলের ম্যানেজার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, তিনি আরো বলেন এখন ব্যবসা মন্দা খুব খারাপ অবস্থায় আছি, বৈধতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে, তিনি বলেন, বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ জানি, মাঝে মাঝে চিলমারী নৌ থানা থেকে পুলিশের গাড়ি আসে, উলিপুর থানা থেকেও পুলিশের গাড়ি আসে, টাকা পয়সা দেই না তবে কিছু দেশীয় মাছ কিনে দিতে হয়, এইতো কয়েকদিন আগে উলিপুর ইউএনও স্যার এসে দেখে গেছেন । ব্যবসা কিভাবে বা কারা চালাচ্ছে, জবাবে ম্যানেজার বলেন পাঁচই জুলাই সরকার পতনের পর ধামশ্রেণী বিএনপি এবং উলিপুর উপজেলা বিএনপি'র ১৫ থেকে ২০ জন মিলে হাতিয়া বালু মহল চালাচ্ছে, এর আগে আওয়ামী অঙ্গ সংগঠন এই মহলটি চালাত, মোট কথা হলো সরকার পতনের পর বালু-মহলেও হয়েছে রদবদল । নাম উঠে আসে রুবেল, রানু মেম্বার, মুন্নাফ, সহ আরো অনেকের।
যোগাযোগ করা হয় স্থানীয় ইউপি সদস্য রানু মেম্বারের সাথে, তিনি পালেরঘাট থেকে বালুর ব্যবসা করেন, ইউপি সদস্য বলেন সরকার পতনের পর থেকে আমি বালুর ব্যবসা করি, আমার পালেরঘাট বালু মহলে কোন ডাম্পার ট্রাক আসেনা শুধু ট্রাক্টর আসে ডাম্পার আসে ভবেশ ঘাটে ।
ভবেশ বালু ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন গাড়ির কারণে রাস্তার যে ক্ষতি হয় তার জন্য আমরা সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেই । অনুসন্ধানে আরো দেখা যায় এলাকায় এনডিপি প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান প্রকল্প এলাকা থেকে কিছু দূরে ড্রেজার মেশিনের শব্দ শোনা যায়, শব্দ অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে গেলে দেখা যায় ড্রেজার মেশিন দ্বারা বালু উত্তোলন চলমান রয়েছে ।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সূত্র জানায়, সঠিকভাবে বলতে পারব না সরকারি কাজের জন্য হয়তো বালু উত্তোলন হচ্ছে কিন্তু সরজমিনে দেখা যায় উল্লিখিত প্রকল্পের সাথে বালুর কোন পাইপলাইন সংযুক্ত নেই, পাইপলাইন অন্য কোথাও, সেখানে থেকে বালু কোথায় যায় তা সঠিক জানা যায়নি । হয়তো সরকারি এই প্রকল্পকে সামনে রেখে আড়ালে চলছে বালু বানিজ্য। এ দায় কার? জানতে চায় এ স্থানীয় জনগণ ।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
কুড়িগ্রাম