মোঃ মুকিম উদ্দিন জগন্নাথপুর প্রতিনিধি
সূর্যের আলো যখন কুয়াশা ভেদ করে প্রকৃতিতে আসে, তখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করে দিগন্ত বিস্তৃত আমনের ক্ষেত। সোনামাখা রোদে মাঠে মাঠে ঝলমলিয়ে উঠে সোনালি ধান। সেই ধানের ঝিলিক যেন ছড়িয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষকদের চোখে-মুখে।
প্রকৃতিতে এখন হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই মাঠে মাঠে সোনালি ধানের হাসি আর নবান্নের উৎসব। আমন ধান ঘরে এলেই গ্রামবাংলার কৃষকদের চিরায়ত এক উৎসবের নাম নবান্ন। অগ্রহায়ণ মাসে ঘরে প্রথম ধান তোলার পর নতুন চাল দিয়ে উৎসবটি পালন করেন সাধারণ মানুষেরা।
জগন্নাথপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা। গানে গানে ধান কেটে চলছেন কৃষকেরা।
জগন্নাথপুর উপজেলার খাশিলার মো.এনামুল বলেন, এবার দুই একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। এখন জমির সেই ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছি। ‘ধানের ফলন ভালো হইচে। দামও ভালো আছে।
উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের সমছুল হক বলেন, খরচ আর ধানের দাম মিলিয়ে এবার মোটামুটি লাভ হবে। ধান উঠলে যেই টাকা হাতে পাবেন, সেটা দিয়ে আবার আলু লাগাবো। ক্ষেত থেকে ধান কেটে আনার পর কৃষকেরা বাড়ির উঠানে মাড়াই করছেন। ধানের মৌ-মৌ গন্ধ এখন কৃষকের উঠানজুড়ে। গ্রামের কোথাও কোথাও বাড়ির গৃহিণীরা সামগাইনে (কাঠের তৈরি ধান-চাল গুঁড়া করার যন্ত্রবিশেষ) নতুন ধানের চাল গুঁড়া করছেন। চালের সেই গুঁড়ায় তৈরি হবে নানা রকমের সুস্বাদু পিঠা-পায়েস।
কলকলিয়া ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামের পারভিন আক্তার, রাজিয়া ও ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘নতুন ধান উঠলেই সেই ধানে চাল করে গুঁড়া করি। গুঁড়া করা চালে তৈরি পিঠা অনেক মজা হয়। পিঠা বানানোর দিন আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা বাড়িতে আসেন। সবাই একসঙ্গে বসে পিঠা বানাই।’
নবান্ন উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো নতুন ধান তোলার এই আনন্দ সবাই একসঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া। গ্রামবাংলার কৃষকদের এই আয়োজনকে অসাম্প্রদায়িক সামাজিক উৎসব বলে মনে করেন স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা। তবে কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে নবান্ন উৎসবের পরিসর অনেকাংশে কমে গেছে।