স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে :
চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের পাশে অবস্থিত শত কোটি টাকার সম্পদ ম্যানোলা হিল দখল করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠার অভিযোগ তুলেছেন মালিক লায়ন মো. নূরুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করে জানান, সন্ত্রাসী ও ভূমিদুস্য সৈয়দ জিয়াদ রহমান ও তার ভাই পারভেজ উদ্দিন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আজিমকে নিয়ে জায়গাটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। ভূমির মালিকানা ছাড়তে একাধিকবার চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকিও দেয় তাকে। এসব ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিলেও সন্ত্রাসীরা পেশীশক্তির জোর দেখিয়ে যাচ্ছেন এখনো।
গতকাল ১৭ নভেম্বর রোববার দুপুরে নগরের একটি রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরে সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগী ম্যানোলা হিলের মালিক লায়ন নূরুল ইসলাম।
নগরীর জামালখান সড়কের এক রেস্টেুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ভূমি মালিক লায়ন নুরুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে লায়ন মো: নূরুল ইসলাম বলেন, আমি ‘স্ট্যান্ডার্ড রোজ ভিলা হাউজিং লিমিটেড’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০১১ সালে ৩০ কোটি টাকা দিয়ে ম্যানোলা হিল ক্রয় করে আমার প্রতিষ্ঠান। তখন থেকে জায়গাটির কর-খাজনাদি নিয়মিত আদায় করে আসছি আমরা। সেখানে থাকা দোকানের ভাড়াও আমরা আদায় করে আসছি। এরমধ্যে গত কয়েক বছর সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু সৈয়দ জিয়াদ রহমান ও তার ভাই পারভেজ উদ্দিন একাধিকবার আওয়ামী সন্ত্রাসী নুরুল আজিমকে সাথে নিয়ে জায়গাটি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করে। বিভিন্ন সময় সশস্ত্র এই সন্ত্রাসীরা আমার নিকট চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে না চাইলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। এসব ঘটনায় ২০২২ সালে চকবাজার থানায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরও করি। সেসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করলে মন্ত্রণালয় আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যানোলা হিলে ২৪ জন স্বশস্ত্র আনসার বাহিনী নিয়োগ প্রদান করেন।
সরকারের পট পরিবর্তনে সন্ত্রাসীরা আরো তৎপর হয়ে ওঠে জানিয়ে লায়ন মো: নূরুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কথিত সন্ত্রাসীরা ৫ আগস্ট ৬০ থেকে ৭০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী লোক নিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ম্যানোলা হিলে হামলা করে। লুটপাট, ডাকাতি ও ভাঙচুরসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে। যার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত আছে। এ ঘটনায়ও সেনাবাহিনীর কমান্ডার অফিসার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দায়েরও করা হয়। এমনকি আমাদের ভাড়াটিয়া দোকানদাররাও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ও থানায় জিডি করেন। এরপরও সন্ত্রাসী জিয়াদ রহমান, পারভেজ উদ্দিন ও নুরুল আজিম ম্যানোলা হিল দখল করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা প্রতিনিয়ত আমার ব্যবসায়িক দোকানদার থেকে চাঁদা দাবি করছে। জোরপূর্বক পানির লাইন বন্ধ করে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ম্যানোলা হিলের মালিক আমরা। সমস্ত বৈধ কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। উল্টো সন্ত্রাসীরা একটি বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। সেখানে স্থানীয় চকবাজার থানা ওয়ার্ড জামায়াতের সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. ইলিয়াছকে দখলদার বলে অবহিত করেছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যেমূলক। ইলিয়াছ আমাদের ব্যবসায়িক পার্টনার। দীর্ঘদিন ধরে আমরা ব্যবসা করছি। এতে কোনো রাজনৈতিক দলের সংম্পৃত্ততা নেই। এটা আমাদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র সন্ত্রাসীরা ম্যানোলা হিল দখল করতে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নাম উচ্চারণ করে সংকট সৃষ্টি করছে। আমরা সন্ত্রাসীদের এমন হয়রানি থেকে মুক্তি ও প্রতিকার চাই। ম্যানোলা হিল প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দিতে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমি প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানাবো।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা জামায়াত নেতা মো. ইলিয়াছ বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রোপ্রাগান্ডা ছড়িয়েছে দখলদার বাহিনীটি। আমার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে বলুক আপত্তি নেই। কিন্তু একটা সংগঠনকে তারা কলুষিত করার চেষ্টা করেছে। এখানে জামায়াতের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ আমি ম্যানোলা হিলে পর্যন্ত যাইনি। কেউ যদি একটা ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারে, তাহলে আমাকে যা শাস্তি দেন মাথা পেতে নেব। আমি ম্যানোলা হিলের মালিক লায়ন মো: নূরুল ইসলামের ব্যবসায়িক পার্টনার। একসাথে ব্যবসা করি। দখলদার সন্ত্রাসীরা এটাকে পুঁজি করে আমার ও জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপ্রাগাণ্ডা চালাচ্ছে। আমি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।