মোঃ বেলাল হোসেন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
দেশের ব্যাংক খাতের একটি অপ্রকাশিত সংকট চট্টগ্রামের ছেলে হওয়ায় চাকরিচ্যুতি। সাম্প্রতিককালে চট্টগ্রামভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যাংকারদের প্রতি একের পর এক বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বেশকিছু বেসরকারি ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ইউনিয়ন ব্যাংক, —এসব ব্যাংকে নিয়োগপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের ছেলেরা একের পর এক চাকরি হারাচ্ছেন।
কোথা থেকে শুরু?
২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট ইসলামী ব্যাংক প্রথম ধাপে ২৫০ জনের নিয়োগ বাতিল করে চাকরিচ্যুত করে কোনো যৌক্তিক কারণ দর্শানো ছাড়াই একটি মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে যা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এর ইতিহাসে বিরল হিসেবে ধারণা করা যায়, এরপর গত ৩১ অক্টোবর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক চাকরিচ্যুত করে আরও ৬৭৮ জনকে। এই পরিস্থিতি থেমে থাকেনি। সোমবার, ইউনিয়ন ব্যাংক একই সিদ্ধান্ত নিয়ে একদিনের নোটিশে একসঙ্গে চাকরিচ্যুত করেছে ২৬২ জনকে।
বর্তমানে চাকরিচ্যুতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে হাজারেরও ওপরে। এছাড়াও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) এর আগেই ৪০ জন ব্যাংকারকে চাকরিচ্যুত করেছে।
চট্টগ্রামের ছেলে হওয়া অপরাধ?
ভুক্তভোগী ব্যাংকারদের দাবি, চাকরিচ্যুতির একমাত্র কারণ তারা চট্টগ্রামের ছেলে এবং এস আলম গ্রুপের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত।
চাকরিচ্যুতদের বক্তব্য, “আমরা ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের আশা করেছিলাম। কিন্তু এখনো আমরা স্বৈরাচারী নীতির শিকার। আমাদের একটাই অপরাধ—আমরা চট্টগ্রামের সন্তান।”
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বেকারত্ব বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। এক চাকরিচ্যুত ব্যাংকার বলেন, “আমাদের চাকরি হারানোর ফলে আমাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে।”
চাকরিচ্যুত ব্যাংকাররা মানববন্ধন এবং আন্দোলন করেও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের অভিযোগ, “আমরা যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেটি এখনো অধরা।”
এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা মারাত্মক বেকারত্বের মুখোমুখি হবে। ব্যাংকারদের দাবী, “যদি দ্রুত এর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে চট্টগ্রামের যুবসমাজ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।”
চট্টগ্রামের মানুষের জন্য এই পরিস্থিতি এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কাছে তাদের আকুল আবেদন—এই বৈষম্য বন্ধ করে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হোক।