সাভার প্রতিনিধি: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জীবিত স্বামী মৃত দেখিয়ে ১৩০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাদী করেন কুলসুমকে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। অবশেষে পুলিশ তাদের কক্সবাজার থেকে আটক হয় তারা।
গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের আলেকজাহান এসএম পাড়ার মোস্তাক আহমেদের বাড়ি থেকে এই মিথ্যা মামলার কারিগর রুহুল আমীন ও শফিকুর রহমানকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। এসময় বাদী কুলসুমকেও উদ্ধার করা হয়। স্বামী আল-আমীনকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলার কথা স্বীকার করেছেন কুলসুম।
আটকরা হলেন মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার টেপড়া গ্রামের মেছের আলীর ছেলে, একই জেলার ঘিওর থানার ফুলহারা গ্রামের মৃত মাসুম আলীর ছেলে। এছাড়া ভুয়া মামলার বাদী ঘিওর থানার স্বল্পসিংজুরি বাঙলা এলাকার আব্দুল খালেকের মেয়ে কুলসুমকেও আটক করা হয়।
আল-আমীনের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, ‘আমি পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুর বাড়ি সিলেট থেকে সাভারে আসি গত ২৮ আগস্টে। আমার স্বামী আমার ভরনপোষণ না দেওয়ায় সাভারে এসে চাকরির খোঁজ শুরু করি। এসময় গাড়িতে পরিচয় হয় শফিকুর রহমান নামের এক ব্যাক্তির সাথে। তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছে জন্ম নিবন্ধন চেয়ে নেয়। পরে একদিন সাভারের সেনা শপিং কমপ্লেক্সে শফিকুর রহমান ও রুহুল আমীন আমাকে ডেকে নেয়। পরে তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে মামলা প্রস্তুত করেছে বলে আমাকে জানায়। আমি রাজি না হলে নানা রকম ভয়ভীতি দেখায় তারা। পরে তারা আমাকে আদালতে নিয়ে উকিলের সামনে কাগজে স্বাক্ষর নেয়। রুহুল আমীন ও শফিকুর রহমান আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে যা বলেছে তাই করতে বাধ্য করেছে। সর্বশেষ তারা আমাকে কক্সবাজারের একটি গ্রামে বাসা ভাড়া করে দিয়ে থাকতে বলে। আমি সেখানেই থাকি, গত ১৯ নভেম্বর কক্সবাজার শফিক আসে। ২১ নভেম্বর পুলিশ রুহুল আমীনসহ কক্সবাজার এসে আশুলিয়া থানা পুলিশ শফিককে আটক করে।
কুলসুম আরও বলেন, স্বামী দাবি করা জীবিত আল-আমীনই আমার স্বামী। তিনি বেঁচে আছেন। আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে মিথ্যা মামলার বাদী বানিয়েছেন। রুহুল ও শফিক আমাকে যা বলতে বলেছে আমি বাধ্য হয়ে তাই করেছি।
বাদী কুলসুমের বোন ফাতেমা বলেন, আমার বোনকে রুহুল আমীন নানাভাবে ভয় দেখিয়েছেন। তিনি মামলা, ফাঁসি এমনকি সবসময় রুহুলের কাছে পিস্তল থাকে বলে ভয়ভীতি দেখান। রুহুল আমীন বেশ কয়েকজনের নাম মামলা থেকে কেটে দিয়েছেন। সে সময় আমার ছোটবোনকে আদালতে নিয়ে যায় তারা। তারা বলতো যে অজ্ঞাত ছেলেটা মারা গেছে সে যেন বিচার পায় সেজন্য এই মামলা দায়ের করেছেন। পরে বুঝতে পারি তারা একটি চক্র ও মামলা বানিজ্যের সাথে জড়িত। পরবর্তীতে ঝামেলা পড়ে আবার তারা একটি কাবিননামা তৈরি করে নিয়ে এসে আমাদের দেয়। সেই কাবিননামাটিও ভুয়া। আমার বোন আশুলিয়া কিংবা সাভারেই থাকতো না। সে থাকতো সিলেটে। শফিক ও রুহুল আমার বোনকে ফাঁসিয়েছ।
এব্যাপারে অভিযুক্ত শফিকুর রহমান বলেন, কুলসুমের সাথে আমার গাড়িতে পরিচয় হয়। পরে তাকে নিয়ে আমি রুহুল আমীনের কাছে যাই। তিনি মামলার সব কাজ করেছেন। এর বেশী কিছু বলতে রাজি হন নি তিনি।
এব্যাপারে রুহুল আমীন বলেন, কুলসুমই এসে আমার কাছে মামলা করার জন্য সহযোগীতা চেয়েছেন। পরে আমি তাকে সহায়তা করেছি। টাকার বিনিময়ে কতজন আসামির নাম বাদ দেওয়ার জন্য এভিডেভিড করেছেন জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, মনোয়ার মাস্টার, বাশার, ইলিয়াস শাহী ও সারোয়ার তালুকদারের নাম মামলা থেকে বাতিলের জন্য এভিডেভিড করা হয়েছে। তবে তাদের কাছে কোন টাকা নেওয়া হয় নি।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক এসআই রকিবুল ইসলাম বলেন, তদন্ত করে বাদীকে উদ্ধার করে দুই জনকে আটক করা হয়েছে। তারা জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়েন করেছিলেন। যে মামলায় আসামি করা হয়েছিল ১৩০ জনকে। অথচ বাদীর স্বামী এখনও বেঁচে আছেন এবং আদালতে উপস্থিত হয়ে আল-আমীন সব স্বীকার করেছেন।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর বলেন, জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়েরের পিছনের কারিগর হলেন শফিক ও রুহুল আমীন। আজ তাদের আটক করা হয়েছে। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে নির্বচারে গুলি ছুড়লে অন্তত অর্ধশতাধিক নিহত হন। তাদের মধ্যে একজনের মরদেহ বেওয়ারিশ দাফন করা হয়। সেই লাশকে আল-আমিন বানিয়ে ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যার বাদী জীবিত আল-আমিনের স্ত্রী কুলসুম। তবে মামলার প্রধান কারিগর রুহুল আমীন ও শফিকুর রহমান বলে জানা যায়।