সুরুজ্জামান রাসেল
গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানার সুরাবাড়ি গ্রামে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া ও ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত সাংবাদিকদের নামে কাশিমপুর থানার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সাংবাদিকদের ফাঁসানোয় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর ২০২৪) সকাল ১১টায় গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে গাজীপুরে কর্মরত সাংবাদিকেরা মানববন্ধন ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
মানববন্ধন চলাকালে সংবাদ সংস্থা এনএনবি’র সম্পাদক জুলীয়াস চৌধুরীর সভাপতিত্ত্বে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, তদন্ত না করে সাংবাদিকদের নামে মামলাটি গ্রহণ করায় পুলিশের পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। বক্তারা সাংবাদিকদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোয় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান
মানববন্ধন থেকে সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা অবিলম্বে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুরাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা দেওয়ান মোজাম্মেল হক একাধিক জাল দলিল তৈরি করে দখলকৃত জমি নিজের নামে নামজারি করিয়ে নেন। ওই জমিতে মো. মাহবুবুর রহমান বিশ্বাস পোল্ট্রি এন্ড ফিশ ফিডস্ লিমিটেডের নামে একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ওই জমির প্রকৃত মালিক হাবেল মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই জালিয়াতি ঠেকাতে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত যাচাই-বাছাই শেষে জমির জাল দলিল বাতিল করেন।
এরপর, হাবেল মিয়া গং জমি পুনরুদ্ধারের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে মিস কেস দায়ের করেন (পিটিশন মোকদ্দমা নম্বর: ৫৪৮/২০২৪ এবং ৫৪৯/২০২৪)। ভূমি অফিস থেকে ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সরেজমিনে তদন্তের নোটিশ প্রদান করা হয়।
ভূমি অফিসের এই তদন্ত কার্যক্রম উপলক্ষ্যে দেওয়ান মোজাম্মেল হক ও তাঁর সহযোগীরা ২১ নভেম্বর ২০২৪ সকালে জমিতে ও জমির আশেপাশে সশস্ত্র লোকজন জড়ো করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে যান এবং তথ্যচিত্র ও ভিডিও ধারণ করে ফিরে আসেন।
পরের দিন, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ভোরে সাংবাদিকরা জানতে পারেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিমপুর থানায় গভীর রাতে মাহবুব গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্রোজেন ফুড শাখার পারচেজ অফিসার মো. শামীম হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা [নম্বর: ২৪/২৪০ (55GNM)] দায়ের করেছেন। মামলায় দৈনিক জনবাণী পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি নাশিদ আহমেদ তুষারকে ১৫ নম্বর আসামিকরা হয়। দৈনিক জনবাণী পত্রিকা ও চ্যানেল এস টেলিভিশনের কাশিমপুর প্রতিনিধি ও কাশিমপুর থানা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মো. জামাল আহাম্মেদ প্রধানিয়াকে ২৯ নম্বর আসামি করা হয়। দৈনিক স্বাধীন বাংলা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মো. হাসমত হাসুকে ৩০ নম্বর আসামি করা হয়। গাজীপুর জেলার স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক কণ্ঠবানীর মফস্বল সম্পাদক নসির উদ্দিনকে করা হয় ৩২ নম্বর আসামি।
অদ্ভুত বিষয় হলো, দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার খোরশেদ আলমেকে ১৬ নম্বর আসামি করা হয়। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। দৈনিক অগ্নিশিখা পত্রিকার কাশিমপুর প্রতিনিধি ও কাশিমপুর থানা প্রেসক্লাবের আইন বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব হোসেন ফারুক, তিনিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, তাকে ৩১ নম্বর আসামি করা হয়।
তরিঘড়ি করে কাজ সারতে সকল সাংবাদিকেরই নামের ভুল বানান, আংশিক নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করা হয়।
দৈনিক জনবাণী পত্রিকা ও চ্যানেল এস টেলিভিশনের কাশিমপুর প্রতিনিধি ও কাশিমপুর থানা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মো. জামাল আহাম্মেদ প্রধানিয়া বলেন, ‘প্রতিপক্ষের হামলার শিকার মো. মালেক ওরফে মালু’র ৯৯৯ এ ফোনের প্রেক্ষিতে কাশিমপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর ও দ্বিতীয় কর্মকর্তা বিপ্লব হোসেন ফারুক সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এর পর পরই ঘটনাস্থলে আসেন কাশিমপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। তখন থেকেই আমরা সাংবাদিকেরা তাদের (পুলিশ) সঙ্গে থেকে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করি। এবং আমরা সাংবাদিকেরা পুলিশের সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। তার পরও কেন আমাদের নামে মামলা হলো তা বোধগম্য নয়।
আরমান হোসেন, দৈনিক স্বাধীন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার মো: হাসমত, দৈনিক স্বাধীন বাংলার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার হোসনে আরা হীরা, দৈনিক জনবাণীর রিপোর্টার ও কাশিমপুর থানা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মো: জামাল আহাম্মেদ প্রধানিয়া, দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রার স্টাফ রিপোর্টার আব্দুর রাজ্জাক রাজু, দৈনিক এই বাংলার দপ্তর সম্পাদক (গাজীপুর) মো: নাসির উদ্দিন, দৈনিক সময়ের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিনিধি মো: হাসান আলি, সিএনএন বাংলা টিভির সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মো: হাইউল উদ্দিন খান, দৈনিক ভোরের ডাকের গাজীপুর মহানগর সংবাদদাতা মো: আল-আমিন হোসেন, মুভি বাংলা টিভির কাশিমপুর প্রতিনিধি আল মনসুর সরকার, বাংলা টিভির কাশিমপুর প্রতিনিধি মো: হাসান সরকার, টপ নিউজ প্রতিদিনের প্রকাশক সামছুদ্দিন জুয়েল, দৈনিক আজকের বাংলার গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মো: গোলাম রসুল (দিনার), দৈনিক সকালের সময়ের বাসন (গাজীপুর) প্রতিনিধি মো: সালাহ উদ্দিন আহমেদ, দৈনিক মুক্ত খবরের বিশেষ প্রতিনিধি মো: সাজুদ্দিন সরকার, দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের রিপোর্টার মো: মেহরাব হোসেন, আমার প্রাণের বাংলা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি আবু সালেক ভুইয়া, দৈনিক একুশে সংবাদের বিশেষ প্রতিনিধি মো. রাজু আহাম্মেদ, দৈনিক আমাদের সময়ের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি ও দৈনিক দেশান্তরের সম্পাদক ও প্রকাশক মো. রফিকুল ইসলাম রফিক।
উপস্থিত ছিলেন, এটিএন বাংলার গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মাজাহারুল আলম মাসুম, দৈনিক কন্ঠবাণীর সম্পাদক জান-এ-আলম, দৈনিক ভয়েস অফ এশিয়ার স্টাফ রিপোর্টার এম.এ ফিরোজ (লাভলু), দৈনিক যায়যায়দিনের গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি বায়েজীদ হোসেন, দৈনিক মর্নিং গ্লোরির গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম জিতু, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক দপ্তর সম্পাদক জাহিদ হোসেন বকুল, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা, ভাষাটিভির সম্পাদক আতিকুল ইসলাম, এবিসি নিউজের ফটোজার্নালিষ্ট স্বপন চন্দ্র দাস, জনতার ক্রাইমের সম্পাদক ও প্রকাশক মো: জাহাঙ্গীর আলম ভোরের কণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক মো. আব্দুল বারী, দৈনিক মাতৃজগতের স্টাফ রিপোর্টার শাহানাজ পারভীন, দৈনিক বর্তমান কথার স্টাফ রিপোর্টার মো: ফয়জুল ইসলাম আরিফ, দৈনিক বর্তমান কথার রিপোর্টার মো: মাহবুব আলম, আসক ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কো-অর্ডিনেটর বাংলাদেশ ও দৈনিক সন্ধ্যাবাণীর ক্রাইম রিপোর্টার মোছা: নাছিমা আক্তার রেনু প্রমুখ।