স ম জিয়াউর রহমান :
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সহ গোটা জাতি গভীর উদ্যোগের সাথে লক্ষ্য করেছে, আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সহ পুরো আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট যে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করেছিল এবং এক হাজারেরও অধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়ে শরীরে এখনও স্প্রিন্টারের দুঃসহ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে, সেই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারিক আদালতে দণ্ডিত সকল আসামিকে সংবিধান, আইন ও সকল বিচারিক রীতিনীতি লংঘন করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে খালাস করে বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনে করে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটি একটি জঘন্য ও ঘৃণ্যতম কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে পবিত্র সংবিধান রচিত হয়েছিল, তাতে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। আজ একুশে আগস্ট মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত ৪৯ জন আসামির সকলকে খালাস করে এই অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার পবিত্র সংবিধানের ওপর কুঠারাঘাত করল।
আওয়ামীলীগ এটি স্মরণ করিয়ে দিতে চায়, ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার পর বিএনপি- জামাত জোট সরকারের নির্দেশে তদানীন্তন পুলিশ এই মামলা গ্রহণ করেনি। এই ভয়ানক গ্রেনেড হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধের হীন উদ্দেশ্যে তারা জজমিয়ার নাটক সাজিয়েছিল। পরবর্তীতে এক এগারোর সরকারের সময় ২০০৭ সালে এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) নতুনভাবে তদন্ত শুরু করে। এক এগারোর সরকারের দ্বিতীয় বছর অর্থাৎ ২০০৮ সালে তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ওই হামলা চালানো হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বিচারিক আদালত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে গ্রেনেড হামলাকারী খুনি এবং এই হত্যাকান্ড ও হামলার পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশ দাতাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ ক্রমে বিচার সম্পন্ন করে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আদালত দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর ন্যায় বিচারের সকল আইনী ও বিচারিক বিধি বিধান ও রীতিনীতি প্রতিপালন করে এই মামলার বিচার সম্পন্ন করে। অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে হাইকোর্টের একটি বিভাগ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও বেআইনিভাবে বিচারিক আদালতের রায় উদ্ভূত ডেথ রেফারেন্স নাকচ করে এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে একুশে আগস্ট নারকীয় হত্যাকান্ড ও গ্রেড হামলার বিচার বন্ধ করার উদ্দেশ্যে এই প্রহসনমূলক রায় দেয়।
আমরা লক্ষ্য করছি, যে হাইকোর্ট বেঞ্চ এই প্রহসন মূলক ফর্মায়েশি রায় দিয়েছে, তার জ্যেষ্ঠ বিচারকের সাথে বিএনপির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত এই বিচারকের ছেলে মাহমুদুস সালেহীন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং নওগাঁ ১ সংসদীয় আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশা। ৫ই আগস্ট এর পর দেশের বিচার বিভাগ ধ্বংস সহ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও খাত ধ্বংস করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, আজ একুশে আগস্ট মামলার রায় বাতিল করে সেটিই প্রমাণ করা হয়েছে। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর পর বাংলাদেশে অসাংবিধানিক ও অবৈধ স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ইনডেম নিটি অধ্যাদেশ বহাল, জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কার ও পুনর্বাসন, দালাল আইন বাতিলের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত খুনের আসামীদের দন্ডাদেশ মওকুফ, সারাদেশে অসাংবিধানিক সামরিক ফরমানের মাধ্যমে প্রচলিত বিচারিক আদালতের পরিবর্তে ক্যাঙ্গারু কোর্ট প্রতিষ্ঠা করে বিচারের পরিবর্তে অবিচার চালু করে এদেশে আইনের শাসন ধ্বংস ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আমরা লক্ষ্য করছি, দেশের জেলখানা গুলো থেকে সকল জঙ্গি ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী, সমর্থক এবং সমাজের অনেক সম্মানিত পেশাজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী এবং অনেক নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করছে।
আমরা ভয়ানক একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার বন্ধের এই অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাবো, দেশ ধ্বংসের যে উন্মত্ত খেলায় আপনারা মেতে উঠেছেন সেগুলো এখনই বন্ধ করুন। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা এই সংবিধান আপনাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।