মোঃ মুক্তাদির হোসেন।
স্টাফ রিপোর্টার।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৩৬ জন বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। সেই থেকে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর শহীদদের স্মরণে কালীগঞ্জে গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে। আজ রোববার সকালে শহীদদের গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করেন উপজেলা প্রশাসন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা গন।
রবিবার সকালে শহীদদের গণকবরে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরী তাসমিন উর্মি, কালীগঞ্জ থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ হাবীব, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. রেজাউল করিম ভূইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল হক বাচ্চু, বাহাদুরসাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আহমেদসহ মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। পরে শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. রেজাউল করিম ভূইয়া জানান, ১৯৭১ সালে ১ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া ন্যাশনাল জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা সকালের নাস্তা খেতে বসে ছিলেন। এসময় হানাদার বাহিনী পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল ক্যাম্প থেকে নদী পার হয়ে মিলের ভেতর ঢুকে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে থাকে। হানাদার বাহিনী সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ন্যাশনাল জুট মিলের নিরীহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে হানাদার বাহিনী গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। গণহত্যা চালিয়ে মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙ্গে মিল ত্যাগ করে পাক বাহিনী। ঘটনার ৩-৪ দিন পর্যন্ত মরদেহগুলো মিলের সুপারি বাগানে পড়ে থাকে। ফলে সেগুলো শেয়াল-শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়। দেশ স্বাধীন হলে এলাকাবাসী মিলের ভেতর গিয়ে ১৩৬ জনের মরদেহ বিকৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। পরে ওই ন্যাশনাল জুট মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনকে গণকবরে সমাহিত করা হয়। বাকী মরদেহ তাদের স্বজনরা নিয়ে যায়। মিল কর্তৃপক্ষ গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘শহীদ স্মরণে ১৯৭১’ নামক একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে। শহীদের গণকবরের পাশে নির্মাণ করা হয় একটি পাকা মসজিদ, কালীগঞ্জবাসী প্রতি বছর এই দিবস টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।