1. Jahidksb@gmail.com : Jahid Hasan : Jahid Hasan
তুমি বন্ধু নও, শকুন: বন্ধুত্বের নামে ভারতীয় আগ্রাসনের শেষ কোথায় - খবর সকাল বিকাল - Khobor Sokal Bikal    
বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ অপরাহ্ন

তুমি বন্ধু নও, শকুন: বন্ধুত্বের নামে ভারতীয় আগ্রাসনের শেষ কোথায়

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

 

বন্ধুত্বের মুখোশে লুকিয়ে থাকা শকুনদের সময় এসেছে চিনে নেওয়ার। ৫৩ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশ আজও বন্ধুত্বের নামে নীরব আগ্রাসনের শিকার। আমাদের আকাশে উড়ছে উন্নয়নের স্বপ্ন, অথচ মাটিতে জমছে শোষণের বিষ। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক চিরকাল থাকবে—এমনটাই আমরা চাই। তবে সেই সম্পর্ক যদি বারবার আমাদের সার্বভৌমত্ব, আত্মনির্ভরতা এবং স্বাধীনতার চেতনাকে আঘাত করে, তাহলে তা বন্ধুত্ব নয়, আধিপত্যের নীরব ষড়যন্ত্র।

প্রতিদিন সীমান্তে ঝরছে নিরীহ প্রাণ। বন্ধুত্বের দাবি করে যে দেশ, সেই দেশের বুলেটে ঝরে যায় আমাদের ভাইবোন।
এক দেশ বন্ধুত্বের কথা বলবে, আরেক দেশ গুলি চালাবে—এ কেমন সম্পর্ক? একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পরও কেউ জবাবদিহি করে না।আমরা ফেলানিদের রক্তের মূল্য চাই।

নদীর পানি একতরফা কেড়ে নিয়ে আমাদের কৃষি ধ্বংস করা হয়। তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আমাদের সংগ্রাম আজও শেষ হয়নি। ভারত একতরফা বাঁধ দিয়ে আমাদের কৃষি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। ফারাক্কা ব্যারাজের মতো প্রকল্পগুলো নদীগুলোর গতিপথ বদলে দিয়েছে, ফলে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা অনাবাদী হয়ে পড়েছে।

আমাদের বাজার দখল করে সস্তা পণ্য ঠেলে দেওয়া হয়, যা আমাদের নিজস্ব উৎপাদনশীলতাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। আমাদের বাজারে ভারতীয় পণ্যের একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি হয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে সস্তায় পণ্য এনে আমাদের অর্থনীতি ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের কৃষি, শিল্প এবং উৎপাদন খাত আজ ধ্বংসের মুখে। ভারতীয় পণ্যে ভরে উঠছে আমাদের দোকানপাট। আমাদের নিজস্ব উৎপাদনের জায়গা সংকুচিত হচ্ছে। বন্ধুত্ব যদি সমান সুযোগের হয়, তবে আমরা কেন প্রতিযোগিতায় বঞ্চিত? এটি কি বন্ধুত্ব? নাকি একপাক্ষিক শোষণ?

ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের মাটি থেকে শিকড় উপড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। সিনেমা, গান, টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে তারা আমাদের ভাষা, ঐতিহ্য আর চিন্তা-চেতনায় বিষ ঢালছে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সংখ্যালঘু ইস্যুকে ট্রাম্পকার্ড বানিয়ে ভারত আমাদের ভেতরে বিভেদ আর অস্থিরতার আগুন জ্বালাতে চায়। বন্ধুত্বের নামে এভাবে আমাদের ভাঙার চক্রান্ত করছে প্রতিনিয়ত। ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যের শক্তি দিয়ে এই ষড়যন্ত্র ধ্বংস করতে হবে।

আমাদের অর্থনীতি আজ একতরফা নির্ভরশীলতার জালে জড়িয়ে পড়েছে। বন্ধুত্ব যদি সমতার ভিত্তিতে না হয়, তবে তা বন্ধুত্ব নয়, তা আধিপত্য। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের উদাহরণ বলা হলেও বাস্তবতা কি তেমনটাই? আমরা প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করছি, এই সম্পর্ক কি সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব, নাকি প্রতারণা?

বাংলাদেশের জনগণের ধৈর্য্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের চুপ থাকার দিন শেষ। বন্ধুত্বের নামে যে আগ্রাসন, তা প্রতিহত করতে হবে। ১৯৭১ থেকে ২০২৪- বারবার প্রমাণ করেছি আমরা কারো রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না। বাংলাদেশ কারো করুণার উপর নির্ভরশীল নয়। আমরা জানি, স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে আত্মনির্ভর হতে হবে। বন্ধুত্বের নামে যে শকুনেরা আমাদের রক্ত শুষে নিচ্ছে, তাদের মুখোশ খুলে ফেলার সময় এসেছে।

স্বাধীন বাংলাদেশ কারো শোষণের ক্ষেত্র নয়। আমরা আমাদের আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে শিখেছি। আজ আমরা বলছি, তুমি বন্ধু নও, শকুন। যে শকুনেরা আমাদের মাটি, পানি আর আকাশকে বিষাক্ত করছে, তাদের প্রতিরোধ করতে আমরা প্রস্তুত। এই আগ্রাসন রুখতেই হবে।

বাংলাদেশ কারো তাবেদারি মানবে না। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এই জাতি শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।

মো: তানজিম হোসাইন,
শিক্ষক ও সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© ২০২৪  সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি