বাংলাদেশের বাজারে প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি এখন সাধারণ মানুষের জীবনে বিষাদের ছায়া ফেলেছে। চাল, আলু, পেঁয়াজ, চিনি, গুঁড়ো দুধ, ভোজ্যতেলসহ সব ধরনের পণ্যের দাম এমন মোহনায় মিলেছে যে, মানুষ খাবার টেবিলে কী রাখবে, কতটুকু রাখবে বা কি বাদ দিবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তদের কাছে বাজারে যাওয়াও যেন এক ভয়ের নাম।
এক সময় বলা হয়েছিল, ভাতের বিকল্প হিসেবে আলু খেতে। অথচ এখন সেই আলুর দামই শত টাকা ছুঁয়েছে! সাধারণ মানুষের জীবনে যেন কোনো স্বস্তি নেই—চাল, ডাল, নুন থেকে শুরু করে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতির মূল কারণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অজুহাত তুলে ভোক্তাদের পকেট কেটে নিচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা হলেও, সিন্ডিকেটের লোভ আর ক্ষমতার কাছে তা অসহায় হয়ে পড়েছে। ভারত থেকে ৩০ টাকায় আসা আলু এ দেশে পৌঁছে কেন ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, তার জবাব কে দেবে?
একদিকে সাধারণ মানুষের সীমাহীন কষ্ট, অন্যদিকে সিন্ডিকেটের নির্মম মুনাফা লোভ—এই বৈষম্যের দায় কার? বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর ভূমিকা এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। তারা কি সত্যিই জনগণের পক্ষে কাজ করছে, নাকি সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় আছে?
সাধারণ মানুষ এখন একটাই প্রশ্ন তুলছে—আমাদের বাঁচার অধিকার কি শেষ হয়ে গেছে? খাদ্যের মতো মৌলিক প্রয়োজন পূরণেও যদি মানুষ দিশেহারা হয়, তবে এই সমাজ কেমন উন্নতির কথা বলে?
এখানে সরকারের দায়িত্ব শুধু তদারকিতেই সীমাবদ্ধ নয়; কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সিন্ডিকেট ভেঙে না দিলে দ্রব্যমূল্যের লাগাম কখনোই টানা সম্ভব হবে না।
মানুষ আর কত লড়বে বাঁচার জন্য? এখনই সময় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার, নয়তো এই সংকট আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করে দেবে। মনে রাখতে হবে, মানুষ বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।
মো: তানজিম হোসাইন,
শিক্ষক ও সাংবাদিক