1. Jahidksb@gmail.com : Jahid Hasan : Jahid Hasan
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছ ইটভাটার গর্ভে বিলীন - খবর সকাল বিকাল - Khobor Sokal Bikal    
বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি’র) লাইন্স মাঠে মাস্টার প্যারেড অনুষ্ঠিত গোলাম ফারুক খোকন ভাই কে জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই আমির হোসেন পদ্মা সেতু হয়ে বেনাপোল-ঢাকা রুটে চালু হলো যাত্রীবাহী ‘রূপসী বাংলা’ এক্সপ্রেস ট্রেন  গোলাম ফারুক খোকন ভাই কে জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই আবু বকর ছিদ্দিক খাল পরিদর্শনে মেয়র ডা. শাহাদাত কালিরছড়াসহ সব খাল উদ্ধার করা হবে, পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে আইনি পদক্ষেপ গোপালগঞ্জ পৌরবিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ শেখ হাসিবুর রহমান সভাপতি – কবিরুল সম্পাদক, সহ ১০১ সদস্য বিশিষ্ট মোরেলগঞ্জে ৮০ জন নারী পেল বিনামূল্যে ল্যাপটপ ভালুকায় শিল্প কারখানার কর্মকর্তাদের সাথে প্রশাসনের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত আশারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল খয়েছ ইসরাইল গ্রেফতার সবার আগে বাংলাদেশ কনসার্টে নেটিজেনদের ৮৮% ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছ ইটভাটার গর্ভে বিলীন

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

 

মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘন কুয়াশায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। প্রকৃতির বৈচিত্রতায় ফোঁটায় ফোঁটায় শিশির বিন্দু গায়ে জড়িয়ে এসেছে শীত। গ্রাম বাংলার বিশেষ এক ঐতিহ্য খেজুর গাছ। সেই শীতের সাথে তাল মিলিয়ে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। একসময় গ্রামবাংলার আকাঁবাকাঁ পথে সারি সারি দেখা যেত খেজুর গাছ, কিন্তু এই খেজুর গাছ আজ বিলুপ্তি পথে। শীতের সকাল আর খেজুরের রস দু’য়ে মিলে ছিল একাকার। কালের বির্বতনে এখন আর সে চিত্র চোখে পড়ছে না।নেপথ্যে রয়েছে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা গুলি। কিছু অসাধু চক্র ইটভাটায় প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন খেজুর গাছ যার ফলে আজ বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ সহ খেজুর-গাছের-রস।
তবুও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছিরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য।বিগত কয়েক বছর পূর্বেও এই অঞ্চলের কিছু মানুষ শীতকাল এলে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন। বিকেল হলেই ধারালো ছেনি বা দা কোমড়ে রশি দিয়ে বেঁধে এই গাছ থেকে ওই গাছের মাথায় রাজত্ব করে বেড়াত। গাছি তার মনের মাধুরী মিশিয়ে শিল্পের মতো করে খেজুর গাছের গলায় দা চালিয়ে দিতেন এবং ঘটি বেঁধে চলে আসতেন।
পরের দিন সকাল বেলা ঘটিভর্তি রস নিয়ে নিচে নেমে আসতেন এবং এই রস বিক্রি করে সংসারের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করতেন। কেউ কেউ কাঁচা রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করতেন। এভাবে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে খেজুর রসের একটি চিরাচরিত সম্পর্ক স্থাপন হয়। তখন কৃষকের ঘরে উঠত নতুন ধান। খেজুরের রস আর নতুন ধান গ্রাম-বাংলার মানুষের মধ্যে নবান্নের উৎসবে মাতোয়ারা করে রাখত। নতুন ধানের পিঠা আর খেজুরের রস শীতের সকালকে করে রাখত মধুময়। ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েসের ধুম চলত।
সময় বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে মানুষের জীবন প্রণালি। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি। মানুষ নিজের প্রয়োজনে ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য ও ইটভাটায় জ্বালানির দাপটে আশপাশের খেজুর গাছসহ অন্যান্য গাছ কেটে ফেলছে আবার কেউ কেউ কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিদেশি গাছের বাগান করছেন। এতে শীতের সকালে খেজুরের রসের স্বাদ আস্বাদন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামের মানুষ। খেজুর গাছ কমে যাওয়া এ অঞ্চলে এখন খেজুরের রস ও গুড় দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। মন চাইলেও এখন আর কাঁচা রস পাওয়া সম্ভব হয় না। টাটকা রস পাওয়া বড়ই মুশকিল ব্যাপার।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় এক সময় হাজার হাজার গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন গাছিরা। এখন কয়েক গ্রাম ঘুরে দু’একটি খেজুর গাছের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার হয়ে পড়েছে। যদিও দু’একটি গাছের সন্ধান পাওয়া যায়, তবে তা থেকে রস সংগ্রহ করার সুযোগ হচ্ছে না। দক্ষ গাছিরা তাদের পেশা পরিবর্তন করায় খেজুর গাছ থাকলেও রস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দিনে দিনে খেজুরের রস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষ। শহরের মানুষরা তো তার ছোঁয়াই পায় না।
তবে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেখানে হয়তো এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা বাংলার ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পিঠার নাম জানতে পারে ও আকার আকৃতি দেখতে পারে। গুটি কয়েক ছাড়া কেউ ক্রয় করেও খেতে পারে না। বিভিন্ন স্টল সাজিয়ে রাখা হয় পিঠা আর দর্শণার্থীরা দেখে দেখে মনে মনে স্বাদ-আস্বাদন করে বাড়ি ফিরে যান।
স্থানীয়রা জানান, অতীতে জেলায় সর্বত্র বহু খেজুর গাছ ছিল। ইটভাটায় জ্বালানির দাপটে খেজুর গাছ কেটে অনেকটাই সাবাড় হয়ে গেলেও যা আছে, ৭৮টি ইউনিয়ন মানুষের খুশি করার পক্ষে কম। ইটভাটায় জ্বালনি হিসাবে অনেক গাছ বিক্রি করা হয়েছে। রস মৌসুমে প্রতিটি খেজুর গাছ ভাড়া হয় ২/৩ শ’ টাকায়। মৌসুমের শেষে অনেকেই গাছা বিক্রি করে দেন। মূলত ইটভাটার জ্বালানির জন্য খেজুর গাছের চাহিদা রয়েছে। যদিও দাম অন্য গাছের তুলনায় কম।
ইটভাটার আইনুযায়ী: কোন ব্যক্তি ইট পোড়ানোর জন্য জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করিবেন না। এই আইনের কোন বিধান বা তদধীন প্রণীত কোন বিধি বা লাইসেন্সের কোন শর্ত লঙ্ঘন করিলে তিনি অনধিক এক বছরের কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং অপরাধ বিচারকালে আদালত যদি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ধারা ৬ এর অধীন আটককৃত ইট ও জ্বালানী কাঠ বাজেয়াপ্তযোগ্য, তাহা হইলে আদালত উক্ত ইট ও জ্বালানী কাঠ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিবেন।
খেজুর গাছের মালিকরা জানান, শীত দ্রুত এসে পড়ায় রস সংগ্রহকারীদের চাহিদা বেড়েছে। চলতি মৌসুমে একটি খেজুর গাছ থেকে ২০-৩০ কেজি রস পাওয়া যাচ্ছে। সপ্তাহে একদিন গাছ কাটা হলে তিন দিন রস পাওয়া যাচ্ছে।
গাছিরা জানান, আমাদের উপজেলাতে একসময় অনেক খেজুর গাছ ছিলো কিন্তু কালের বির্বতনে তা হারিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে ৫ বছর আগে আমাদের গাছ কাটার জন্য আমার মত অনেক লোক পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলো কিন্তু এখন তেমন খেজুর গাছ না থাকায় এই কাজ কেও করতে চাই না।
রসপায়ীরা জানান, শীতের সকালে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে খেজুর রস খাওয়ার মজাই আলাদা। আরও মজা লাগে খেজুরের রস দিয়ে গুড়/পাটালি দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের পিঠা বানিয়ে খাওয়া। সকাল ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস রস খেলে শরীর অনেকটা সতেজ থাকে।
তালা উপজেলার খেজুর শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ২৬ বছর যাবত খেজুর গাছ কেটে আসছি। খেজুর গাছ বিলুপ্তি হওয়ায় আগের মতন খেজুর গাছ কাটা লাগে না। খেজুর গাছ গুলো এখন যাচ্ছে ইটভাটায়। জ্বালানি কাঠ ও কয়লা আপেক্ষা খেজুর গাছ সস্তা দামে পাওয়া যায় বলে ইট ভাটায় এর চাহিদা বেশি। কেননা, খেজুরের গাছে পোড়ানো ইটের রং গাঢ় হয়। সময়ের পরিবর্তনে ও সচেতনতার অভাবে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস।
সকল রসপায়ী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, কিছু অসাধু ব্যাবসায়ীরা তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য খেজুর গাছ কেটে ইটভাটায় বিক্রয় করছে। যদি এই অসাধু ব্যাবসায়ীদের এখনি আটকানো না যায় তাহলে ভবিষ্যতে তালা উপজেলাসহ প্রায় সকল উপজেলায় খেজুর গাছের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর হয়ে পরবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© ২০২৪  সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি