বাবলু আচার্য্য
মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ-
ভিকটিম বিশ্বমনি দাস (২৫) নিরালা পান পুঞ্জিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। গত ০৫/১২/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ সকল অনুমানিক ০৭.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরবর্তীতে বিকাল আনুমানিক ০৩.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম এবং তার সহকর্মীসহ নিরালা পুঞ্জি হতে কাজ শেষে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে বিকাল ০৪.৩০ ঘটিকার সময় উদনাছড়া চা বাগানের ১১নং ভাঙ্গা ব্রীজের নিকট পৌঁছিলে তার সহকর্মীদের বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিম পরে পিছনের লোকদের সহিত বাড়ী আসবেন বলে জানান। কিন্তু ঐ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর ভিকটিম বাড়ীতে ফিরে না আসায় আশপাশে খোঁজাখুজি শুরু হয়। পরবর্তীতে বাদীর পরিবারের লোকজন মিলে ভিকটিমকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকলে গত ০৭/১২/২০২৪খ্রিঃ তারিখ সকাল আনুমানিক ০৯.০০ ঘটিকার সময় শ্রীমঙ্গল থানাধীন ০৭নং রাজঘাট ইউপির অন্তর্গত উদনাছড়া চা বাগানের ১১নং সেকশনের বাগানের ভিতরে চারা কড়ই গাছের নীচে বাদীর বোনের মৃতদেহ গলায় তার পড়নের ওড়না দিয়ে গলায় শক্ত গিট দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান। পরবর্তীতে ঘটনার সংবাদ পাইয়া স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ ঘটনাস্থলে এসে বাদীর বোনের মৃতদেহ দেখতে পান। উক্ত বিষয়ে থানায় সংবাদ দিলে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের ছোট ভাই বাদী থানায় অভিযোগ দায়ের করলে শ্রীমঙ্গল থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়।
চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সুপার, মৌলভীবাজার মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় শ্রীমঙ্গল সার্কেল এবং অফিসার ইনচার্জ শ্রীমঙ্গল থানার তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) এর নেতৃত্বে এসআই/আব্দুর রহিম জিবানসহ কাজ শুরু করে শ্রীমঙ্গল থানার চৌকস টিম। তদন্তের এক পর্যায়ে গত ১০/১২/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ উদনাছড়া চা বাগানস্থ রনজিত সাঁওতাল(২১), পিতা-শংকর সাওতাল’কে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, ভিকটিমের সাথে বিগত ০৬ (ছয়) মাস যাবত তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ভিকটিমের সাথে ইতিপূর্বে একাধিকবার তার শারীরিক সম্পর্ক হয়। ভিকটিম অন্তঃসত্বা হয়ে পড়ায় আসামী রনজিত তাহাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার ঔষধ কিনে দেয় । গত ০৫/১২/২৪ খ্রিঃ তারিখ উদনাছড়া চা বাগানের ১১নং সেকশনে বিকাল অনুমান ১৭.০০ ঘটিকার সময় আসামী রনজিত সাঁওতাল ভাঙ্গা ব্রীজের পাশে রাস্তায় ভিকটিমের জন্য অপেক্ষা করতে ছিল। ভিকটিম নিরালা পুঞ্জি থেকে কাজ শেষে বাড়ীতে ফেরার পথে আসামী রনজিত সাঁওতালকে দেখে সহকর্মীদের কাছ থেকে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে পিছনে থেকে আসামী রনজিত এর সাথে দেখা করে। ভিকটিম আসামীর সাথে কথা বলার একপর্যায় বিয়ে করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে নতুবা ভিকটিম বিষ খাওয়ার হুমিক প্রদান করে। আসামী রাজি না হয়ে চলে যেতে চাইলে ভিকটিম তার সাথে থাকা বিষ খেয়ে ফেলে। ভিকটিম বিষক্রিয়ায় ছটফট করতে থাকলে ঐ সময় অপরদিক থেকে বাই সাইকেলে লোক আসতে দেখে আসামী ভিকটিমকে তাহার গায়ের উড়না গলায় পেঁচিয়ে দুইটি গিট দিয়ে টেনে চা বাগানের ভিতর নিয়ে যায়। ভিকটিমের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরন করলে আসামী রনজিত সাঁওতাল ভিকটিমের গলার সাথে গিট দেওয়া উড়নার অপর অংশ চারা গাছের গোড়ার সাথে বেঁধে পালাইয়া বাড়ীতে চলে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রনজিত সাঁওতাল ঘটনার বিষয়ে স্বীকার করেছে।