মাহিদুল ইসলাম ফরহাদ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
দুই দল কিশোরের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও ধাক্কা ধাক্কিকে কেন্দ্র করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মল্লিকপুরে বিজয় দিবসের পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে ছুরিকাঘাতে দুই কিশোর নিহত হয়েছে।
এ ঘটনায় সুমন ও রজব নামে আরও ২ জন আহত হয়েছে। তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
মঙ্গলবার (১৭ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে, নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহত ও নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম।
নিহতরা হলো নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের খোলসী গ্রামের এজাবুলের ছেলে মাসুদ (১৬) আব্দুর রহিমের ছেলে রায়হান (১৫)। ০৩। জালাল, উদ্দিনের ছেলে মোঃ সুমন (১৮), আলমের ছেলে, ০৪। মোঃ রজব আলী রনি (১৪),, ৫। মোঃ রব্বানী পাতুর ছেলে মোঃ আরমান (১৬), ও ফিরোজের ছেলে ০৬। মোঃ ইমন (১৫)
এবিষয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, পিয়ারা বাগানে কাজ করা নিয়ে গত দুই সপ্তাহ আগে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়, বাহির মল্লিকপুর গ্রামের কিছু বখাটে যুবকের সাথে এরিই জের ধরে তাদের মারধর করা হলে ঘটনা স্থানে মারা যান, মাসুদ ও রায়হান। এবং ঐ ঘটনায় আরো দুই জন আহত হন। আপনাদের এতো গুলো স্বেচ্ছাসেবক ও আইন শৃংখলা বাহিনী থাকার পরও কি ভাবে এত বড় ঘটনা ঘটেছে তাদের কাছে জানতে চাইলে, আমরা অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই কিছু বুঝতে পারনি।
মাসুদ ও রায়হানের পরিবার জানায়, কি কারনে এ হত্যাকান্ড তার কিছুই জানেন না তারা মাসুদের বাবার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা করে সে কখনো কারো জমিতে দিন মজুরীর কাজে যাননি। কে”বা কারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে জানতে চাইলে, আমার ছেলের কারো সাথে শত্রুতা ছিল না, কে”বা কারা ঘটিয়েছে আমরা বলতে পারব না।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফাহাদ আকিদ রেহমান জানান, আমাদের কাছে আসার পূর্বেই মাদুস ও রায়হান মারা যায়। ইসিজি করে আমরা নিশ্চিত হয়। আর দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, তাদের ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে।
এদিকে, নাচোল থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে জানাগেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে দুই দল কিশোরের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত প্রকৃত কারন জানা য়ায়নি।
ঘটনার বিষয়ে আজ দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, ০১। মোঃ মাসুদ ০২। রায়হান ০৩। মোঃ সুমন ০৪। মোঃ রজব আলী রনি ৫। মোঃ আরমান ০৬। মোঃ ইমন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানাধীন মল্লিকপুর গরুর হাটে শহীদ জিয়া স্বরণে আয়োজিত আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে লোকজন চলে যাবার সময় স্থানীয় একই বয়সী ছেলেরা পূর্ব শত্রুতার জেরে ১৭/১২/২০২৪ তারিখ ১১.৫৫ মিনিটে গরুর হাট সংলগ্ন মাছ বিক্রয়ের ঘরে উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিদেরকে ছুরিকাঘাত করে। তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত লোকজন আহতদেরকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহত মাসুদ ও রায়হান মৃত্যুবরণ করেন। আহত সুমনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল এর জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, ঘটনার প্রায় ১২ হতে ১৫ দিন পূর্বে নাচোল উপজেলার খোলসী গ্রামের মোঃ আব্দুল খালেকের পেয়ারা বাগানে স্থানীয় লেবার সরদার সালাম ও সাধারণ লেবার শাহীন পেয়ারা বাগানে পলিথিন (পিপি) বাঁধার কাজ করছিল। কাজ করার সময়ে শাহীন গোপনে লেবার সরদার সালামের প্রসাব করার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে। বিষয়টি জানাজানি হলে উভয়ের মধ্যে কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এটাকে কেন্দ্র করেই উভয় পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই জের ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সালাম ও তার লোকজন অনুষ্ঠান দেখতে আসলে শাহীন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা পূর্বে থেকেই ওতপেতে থাকে। সালাম ও তার লোকজন উপরোক্ত ঘটনাস্থলে পৌঁছিলেই শাহীন ও তার লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ০৬ (ছয়) জনকে গুরুত্বর আহত করে। ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই সংবাদ পেয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ১। মোঃ আজিজুল হক (৫২), পিতা- বাহার আলী মন্ডল, ০২। মোঃ তাসিম (৩২), পিতা-মোঃ এজাবুল, উভয়ের গ্রাম-মল্লিকপুর, থানা-নাচোল, জেলা- চাঁপাইনবাবগঞ্জকে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ডে জড়িত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।