সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানায় লে-অফ এর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন। ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন এবং সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে লে-অফ ঘোষণা করায় ১৬টি কারখানার হাজার হাজার শ্রমিকের চাকুরির অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, ঋণখেলাপী ও বিদেশে টাকা পাচারকারী সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন গাজীপুরে অবস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানায় শ্রমিকদের মজুরি মাসের পর মাসে বকেয়া রেখে আসছে। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা অবরোধ করলে সরকার জনগণের প্রদেয় অর্থ থেকে শ্রমিকদের অক্টোবর মাসের মজুরি পরিশোধের জন্য বেক্সিমকোকে ৬০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এরপরও কারখানায় পর্যাপ্ত অর্ডার না থাকার কথা বলে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ কারখানা লে-অফের ঘোষণা দেয়। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ৪০ হাজার শ্রমিক কর্মরত থাকার কথা জানা যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর (রোববার) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভায় লে-অফের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নেতৃদ্বয় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে গার্মেন্টস শ্রমিকরা যখন মজুরি বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছে সেখানে বেক্সিমকো র হাজার হাজার শ্রমিকদের লে-অফ করার মাধ্যমে তাদের মজুরি প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী ৪৫ দিন বা ৬০দিন লে-অফ থাকার পর পরবর্তীতে ২০-ধারায় ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে কারখানা বন্ধ করে দেয়ার শংকা রয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার শ্রমিকের চাকুরিচ্যুত হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, এসব শ্রমিকদের উপর তাদের পরিবারসমূহ নির্ভরশীল। বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য মজুরি দিয়ে সংসার চালাতে না পেরে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে, অথচ শ্রমিকদের রুটি রুজির কথা না ভেবে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মচ্যুত করার মাধ্যমে সরকারের দায়িত্বহীনতার প্রকাশ ঘটেছে। বরং বেক্সিমকো গ্রুপের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার রপ্তানি আয় এখনো বিদেশে রয়েছে। সরকার এ টাকা দেশে এনে শ্রমিকদের দায়-দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখে নি। শুধু জনতা ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো গ্রুপ ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা ঋণখেলাপী করে। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার ও লুটপাট করার পরেও সরকার বেক্সিমকো গ্রুপের সকল সম্পদ জনগণের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত না করে এবং শ্রমিকদের দায়িত্ব না নিয়ে বরং বেক্সিম গ্রুপকে বিভিন্নভাবে রক্ষা করে যাচ্ছে। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতৃদ্বয় বলেন- বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ বেক্সিমকো গ্রুপের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে হলেও শ্রমিকদের চাকুরি ও মজুরির নিশ্চয়তা সরকারকে প্রদান করতে হবে।