মো: মোসলেম উদ্দিন সিরাজী
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জ শহরের বাহিরগোলা বাজারে কাঁটাখালি নদীর ওপর নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ব্রিজটি নির্মাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এরই মধ্যে প্রকল্পের টাকা ফেরত গেছে। ঠিকাদারকে দিতে হয়েছে জরিমানা। ঠিকাদারসহ নির্মাণকাজে নিয়োজিত লোকজন এখন পলাতক। এতে অন্তত ২৫ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, নতুন বছরে ব্রিজটির অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ২০২৬ সালে নতুন করে প্রকল্পের চাহিদা দেওয়া হবে। তখন বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (প্রথম পর্যায়) (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শহরের বাহিরগোলা বাজারে কাঁটাখালি নদীর ওপর ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মইনউদ্দিন (বাশি) লিমিটেড এ কাজ পান। সাত কোটি ২৮ লাখ দুই হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রিজটির কাজ ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ২০২২ সালের মার্চে অর্ধেক কাজ করে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেন। তখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুই কোটি ৬৮ লাখ টাকার বিল দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।আরও জানা গেছে, প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ জুন কাজটি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে ঠিকাদার কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের অবশিষ্ট চার কোটি ৬০ লাখ টাকা শেষ পর্যন্ত ফেরত যায়। এ ব্রিজের জন্য আপাতত নতুন করে আর কোনো বরাদ্দ আসার সম্ভাবনা নেই। ফলে অন্তত ২৫ গ্রামের মানুষ এ ব্রিজের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
আলী আশরাফ নামে নির্মাণাধীন ব্রিজের পার্শ্ববর্তী এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘২০২১ সালে কাজটি শুরু হলেও ঠিকাদার প্রথম থেকে খুব ধীরগতিতে কাজ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো তদারকি করেনি। এ বছর কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা না হয়ে এখন নির্মাণকাজই বন্ধ রয়েছে। এতে নতুন ভাঙ্গাবাড়ি, জানপুর, রানী গ্রাম, খোকশাবাড়ি, ছোনগাছা, পাঁচঠাকুরী, কাজীপুরসহ প্রায় ২৫ গ্রামের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।তিনি আরও বলেন , ‘ব্রিজটির কাজ শেষ না হওয়ায় এলাকার নারী, পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেক দিন ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। অনেক সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে অসুবিধায় পড়তে হয়। এ ছাড়া অসম্পূর্ণ কাজের কারণে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।’
নুরুন্নবী নামে স্থানীয় আর এক বাসিন্দা বলেন, যে ঠিকাদার কাজটি পেয়েছিল, সেই ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখে পালিয়েছেন। আমাদের এখন যাতায়াত করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। সরকারের কাছে দাবি, ব্রিজটি যেন দ্রুত সম্পন্ন করে দেওয়া হয়। ব্রিজটি না থাকায় কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে।ব্রিজটি হলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হতো। সবাই অপেক্ষায় আছি, কবে শেষ হবে ব্রিজের কাজ।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র সদস্য মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, ‘ওখানে থাকা রেলওয়ের ব্রিজটি অনেক পুরোনো। স্থানীয়দের যাতায়াতের সুবিধার জন্য পাশেই আরেকটি নতুন ব্রিজের কাজ ২০২১ সালে শুরু হয়। চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা ছিল, কিন্তু তা আর হয়নি। ঠিকাদারের লোকজনকেও কোনো কাজ করতে দেখছি না। কবে কাজ শেষ হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মইনউদ্দিন (বাশি) লিমিটেড ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছে। তবে এই কাজটি শেষ করতে রাজস্ব খাতে চাহিদা দিয়েছি। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু করা হবে। তবে কত দিনে এই বরাদ্দ আসবে তা সঠিক বলতে পারছি না।