মারুফ সরকার, প্রতিবেদক :
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, জননেতা তরিকুল ইসলামে রাজনৈতিক সহযোদ্ধা এবং চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত সাবেক ইউপি মেম্বার প্রবীণ বিএনপি নেতা মুনছুর আলী মারা গেছেন (ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত রবিবার (২২ ডিসেম্বর) ভোর ছয়টায় রাজধানীর অরোরা স্পশালাইজড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, তিনি বার্ধক্যজনিত নানান রোগে ভুগছিলেন।
তিনি জনপ্রিয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জিয়া সাইবার ফোর্সের গণসংযোগ বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব নাহিদের নানা এবং লেখক-শিক্ষক খালিদ ফেরদৌসের বাবা। তাঁর মৃত্যুতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জিয়া সাইবার ফোর্সের প্রেসিডেন্ট নাসিফ ওয়াহিদ ফাইজাল গভীরভাবে শোক জ্ঞাপন করেছেন।
গত রবিবার জানাজা শেষে চুড়ামনকাটি উত্তর পাড়াস্থ পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন অনুষ্ঠিত হয়।
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নানাকে নিয়ে ফেসবুকে স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, ‘নানাকে চির বিদায় দিয়ে আসলাম। নানার সাথে অনেক স্মৃতি, ২৫২ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করায় কাছে খুব একটা পেতাম না। তবে নানাবাড়ির প্রতি ঝোক ছোটবেলা থেকেই, নানী চলে যাওয়ার পরেই বাড়িটা শুন্য শুন্য লাগতো এখন শুন্যতায় পরিপূর্ণ যেন!
বছরে দুই একবার দেখা হতো, তবুও দেখা হওয়ার যে আকুল আবেদন তা ভোলার নয়!
আমার নানা শুধুমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বহু মানুষের আশ্রয়ের বাতিঘর।নিজের পরিবারের সবার লেখাপড়া, খাওয়াদাওয়ার খোঁজখবর তো রাখতেনই। নিজ গ্রাম ও আশেপাশের মানুষের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত ছিলেন। কার বিয়েতে টাকার কমতি পড়েছে, কার ঘর করতে সমস্যা হচ্ছে এগুলো সব তাঁর নজরে থাকতো! নিজ হাতে অনেক মানুষের ঘর সংসার গড়েছেন। তিনি ছিলেন দুর্দান্ত একজন ব্যবসা সফল মানুষ। সময়ের প্রতি তাঁর অসীম ভালোবাসা, একদম হিসেব করে চলতেন সবকিছু।
যশোর জেলার সত্যিকারের কাণ্ডারী জননেতা তরিকুল ইসলামের একনিষ্ঠ হাতিয়ার ছিলেন নানা। তাঁর সাথে যশোরের বিএনপির প্রতিষ্ঠার সময় ছিলেন। তিনি চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে প্রথম বিএনপির পতাকা ওড়ান নানা। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এসে নানার হাত ধরে বক্তব্য দেন চুড়ামনকাটির মাটিতে।
নানার মুখে শোনা সবচেয়ে মর্মান্তিক গল্পটা হচ্ছে নির্বাচনের দিন সড়ক দুর্ঘটনা। ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যশোর-৯ আসনের প্রার্থী হন জননেতা তরিকুল ইসলাম। চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের একনিষ্ঠ দায়িত্বে ছিলেন আমার নানা জনাব মুনছুর আলী সরদার।
নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে ভোটার নিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, তন্মধ্যে ট্রেনের সাথে গাড়ির দুর্ঘটনা হয়, নানার ভাষায়, তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি মারাই গেছেন! তবে হুশ ফেরার সাথে সাথেই বলেছিলেন, আমার তরিকুল ভাই ভোটে জিতেছে তো?
সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আহত পা নিয়ে পথ চলেছেন। তিনবার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে বিজয়ীও হয়েছেন। সততা নিষ্ঠা পরপোকারিতা আর সময়ানুবর্তিতার এক অনন্য উদাহরণ ছিলেন আমার নানা, এই দুনিয়া ছেড়ে একদিন সবাইকেই চলে যেতে হবে। তবুও বিয়োগের সময়টায় হৃদয়ে ব্যথা তো লাগেই, আল্লাহ্ নানাকে বেহেশত নসীব করুন।’