মোমিন আলি লস্কর ও জয়দীপ মৈত্র দক্ষিণ দিনাজপুর,:-
বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর। বরাবরই দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষকরা মূলত ধান, পাট, গম ও সরষে চাষ করে থাকেন। আর তাই কৃষি প্রধান জেলা হিসেবেই পরিচিত দক্ষিণ দিনাজপুর নামের জেলাটি। প্রায় এক বছর যাবৎ গাঁদা ফুলের চাষ করেও লাভের মুখ দেখছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ও জেলার বিভিন্ন ব্লকের চাষিরা। দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষকরা আগে মূলত ধান, পাট, গম ও সরষে চাষ করতেন। বর্তমানে ওই সব ফসলের দাম কমায় ও কৃষির খরচ বাড়ায় অন্য চাষের চিন্তাভাবনা করছিলেন এই এলাকার কৃষকরা। অবশেষে কয়েক বছর আগে এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক গাঁদা ফুল চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে স্বল্প আয়তনের জমিতে তারা শুরু করেন এই চাষ। নদিয়ার রানাঘাট থেকে গাঁদা ফুলের চারা নিয়ে আসেন এখানকার কৃষকরা। আশ্বিন মাসে জমি তৈরি করে চারা বোনা হয়। সব মিলিয়ে খুব বেশি হলে এক বিঘে আয়তনের জমিতে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো ফলন হলে ফুল বিক্রি হয় দ্বিগুণ দামে। এতে লাভের হার অনেকটাই বেশি হয় ধান, গম, পাট বা ভুট্টা চাষের চাইতে। আর শীতকালে নানান অনুষ্ঠানে গাঁদা ফুলের চাহিদাও বেশি থাকে। গত ২ বছর পূর্বে চলতে থাকা করোনা মহামারীর কারনে ব্যবসায় মন্দা প্রভাব পড়লেও বর্তমানে তারা যথেষ্টই সাবলম্বী। যে কারনে শীতের মরসুমে কম খরচে গাঁদা ফুলের চাষ করে লক্ষ্মীর ভাড়ার পূর্ণ হচ্ছে চাষিদের। জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের গাঁদা ফুলের এক চাষি বিষ্ণুপদ সরকার জানান, তার সামান্য কিছু জমি ছিল। সেই জমিও অন্যের কাছ থেকে জমি “লিজ়”, আঞ্চলিক ভাষায় যাকে “খায় খালাসি” নেওয়া বলে, এমনটাই করে তাতে গাঁদা ফুলের বীজ লাগিয়েছেন। ২৫ পয়সা দরে চারা এনে জমিতে লাগান। অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তিনি বাজারে ফুল বিক্রি শুরু করেন। এক বিঘে আয়তনের জমিতে চাষ করতে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই টাকা এক মাসেই উঠে এসেছে বলে দ্বিধাহীন ভাবে জানান বিষ্ণুপদবাবু। তিনি আরও বলেন, তাকে অনুসরণ করে এলাকার আরও বেশ কিছু কৃষক গাঁদা ফুল চাষে এগিয়ে এসেছেন। জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিকল্প চাষের জন্য নানা সরকারি প্রকল্প রয়েছে। এতে খুব কম খরচে চাষ করতে পারবেন কৃষকরা। বলাই বাহুল্য, গাঁদা ফুলের চাষ করে যথার্থ লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। প্রতিবেশী বাংলাদেশেও গাঁদা ফুল চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের চাষও করে চলেছেন সেদেশের কৃষকেরা। পশ্চিমবাংলার উত্তর ২৪ পরগণা এবং নদিয়াতে প্রচুর প্রচুর ফল এবং ফুলের চাষ হচ্ছে, সেই ধারাকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে চাইছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের ফুল চাষিরাও।