শহরের ব্যস্ততম ফুটপাতগুলো যেন প্রতিদিন একটি নীরব কান্নার প্রতিচ্ছবি। হিমেল বাতাস আর কুয়াশায় ঢেকে থাকা ভোরগুলোতে নগরের ফুটপাতে দেখা মেলে জবুথবু ভাসমান মানুষের। শীতের প্রকোপে কুঁকড়ে থাকা মানুষগুলো এক টুকরো উষ্ণতার জন্য কখনো কাগজ-পলিথিন জড়ায়, কখনো জ্বালায় ভাঙা কাঠ কিংবা প্লাস্টিক।
তাদের কষ্টের ছবিটা এতটাই স্পষ্ট যে, দেখলেই বুকের ভেতর একটা চাপা আর্তনাদ ওঠে। গরম কাপড়ের অভাবে রাতভর ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা মানুষগুলো যেন নিঃশব্দে বলছে, “আমাদেরও বাঁচার অধিকার আছে।” অথচ নগরের প্রাচুর্যপূর্ণ জীবনের ভিড়ে তাদের এই কষ্ট যেন হারিয়ে যায়। বিত্তবানদের গাড়ির জানালা দিয়ে হয়তো এক ঝলক চোখ পড়ে, কিন্তু সহানুভূতির হাতটা বাড়ে না। এই মানুষগুলোর জন্য শীত মানে শুধুই যুদ্ধ—প্রকৃতির বিরুদ্ধে, সমাজের উদাসীনতার বিরুদ্ধে।
রিকশাচালক রুকন বলেন, “হাত-পা অবশ হয়ে আসে শীতে। তারপরেও রিকশা চালাই। ৫ জনের সংসার তো চলবে কীভাবে?” তাদের জীবনযুদ্ধ থেমে থাকে না। কিন্তু শীত তাদের লড়াই আরও কঠিন করে তোলে।
শীতের তীব্রতায় ফুটপাতে শুয়ে থাকা পথশিশুগুলোর কষ্ট যেন আরও অসহনীয়। কারও গায়ে পুরনো ছেঁড়া কাপড়, কারও গায়ে কাপড়ই নেই। অন্ধকার রাতে জমে থাকা শিশিরের নিচে শুয়ে থাকা সেই মানুষগুলোর জন্য যেন শীতের প্রতিটি রাত একেকটি চ্যালেঞ্জ।
নগরের রাস্তাঘাটে শীতের দাপট তুলনামূলক কম হলেও, তীব্র বাতাস আর ভোরের কুয়াশা জীবনযুদ্ধকে আরও কঠিন করে তুলছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা আরও কমতে পারে, যা এই মানুষদের জন্য হতে পারে মৃত্যুপ্রবাহের সমান।
কোনোদিন এই মানুষগুলোর জন্য উষ্ণতা ছড়ানো কম্বল আসবে কি? কেউ কি বাড়িয়ে দেবে সহানুভূতির হাত? তাদের এই হিমেল রাতগুলো কি কবে উষ্ণ হবে? এই প্রশ্নগুলো আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারলেই হয়তো ফুটপাতে শুয়ে থাকা সেই মুখগুলোয় একটুখানি প্রশান্তি দেখা যাবে।
মো: তানজিম হোসাইন
শিক্ষক ও সাংবাদিক