মো: মোসলেম উদ্দিন সিরাজী
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
তারিখ: ১৩/০১/২০২৫ ইং
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সলপ ইউনিয়নের নলসোন্দা নতুন হাট-বাজারে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে সন্ত্রাসী বাহিনীরা। উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে সেনাবাহিনী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও শতাধিক ব্যক্তির নামে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন উল্লাপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি) রাকিবুল আহসান জানান, মামলার এজাহারভুক্ত আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য জোর তৎপর অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আসামীরা হাট ভাংচুর ও লুটপাট করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি উপরন্ত তারা মামলার বাদী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েই চলেছে। এতে আসামীদের অব্যাহত হুমকিতে মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিনসহ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা চরমভাবে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। ফলে নিরাপত্তাহীন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের জানমালের নিরাপত্তার পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে হাট-বাজারটি পুনরায় চালুর জন্য পুলিশ প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ ইউনিয়নের নলসোন্দাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীদের উদ্যোগে নলসোন্দা গ্রামে নতুন একটি হাট-বাজার স্থাপন করা হয়। হাট- বাজারটি স্থাপিত হওয়ার পর এলাকার মানুষের অতিনাগালের মধ্যে হওয়ায় হাট-বাজারটি গ্রহণযোগ্যতা পায় অত্যান্ত সুনামের সাথে উল্লাপাড়ার নলসোন্দা হাট বাজার ও
দীর্ঘদিন সময় ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এলাকার একটি কুচক্রী ও স্বার্থেন্বেষী মহল তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট হাটের ক্ষতিসাধন করার জন্য নানা অপতৎপরতা শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে নলসোন্দা গ্রামের মোক্তার হোসেন মোল্লা (৭০), মোঃ শাহীন মোল্লা (৫৮), মোঃ শরিফুল ইসলাম শাহাদত (৫৫), মোঃ আব্দুল মান্নান (৬০), মোঃ নাসির মোল্লা (৫৮), মোঃ জমির মোল্লা (৪২), মোঃ নোমান মোল্লা (৩৮), মোঃ শওকত সরদার (৬৫), মোঃ দেলোয়ার প্রামানিক (৫০), মোঃ আব্দুল মালেক মোল্লা (৩২), মোঃ আমিরুল ইসলাম মোল্লা (৪৫), মোঃ আলামিন মোল্লা (৪৫), মোঃ আমিরুল ইসলাম বোরা (৪০), মোঃ জিল্লুর রহমান (৫০), মোঃ মনি মোল্লা (৩২), মোঃ বরাত খন্দকার (৩৮), মোঃ মন্টু মোল্লা (৫৫), মোঃ সাইদুল মোল্লা (৫০), মোঃ কাওছার মোল্লা (২০), মোঃ রাজিবুল মোল্লা (৩০), মোঃ এনামুল মোল্লা (৪২), মোঃ আমিন মোল্লা (৪৬), মোঃ হান্নান মোল্লা (৫৮), মোঃ ইউসুফ মোল্লা (৪২), মোঃ সামসাদ মোল্লা (৩৫), মোঃ হাসিবুল মোল্লা (২৪), মোঃ ইমন মোল্লা (২৩), মোঃ বাইজিদ বোস্তামি (৩৩), মোঃ সোনা উল্লাহ মোল্লা (৩৫), মোঃ আব্দুল মোমিন খা (৩৮), মোঃ জুয়েল খা (৪০), মোঃ নয়ন মোল্লা (২৪) ও লক্ষিকোলা গ্রামের মোঃ কালাম আকন্দ (৫৮) সংঘবদ্ধ হয়ে নলসোন্দা নতুন বাজারে এসে জনসম্মুখে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহড়া প্রদর্শন করে ও দোকানপাটগুলোতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ও বাজারে আগত ক্রেতাসাধারণসহ উপস্থিত লোকজন ভয়ে দৌড়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে সেনাবাহিনী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিন জানান, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ
নলসোন্দা নতুন বাজারে মুদিখানা দোকান করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু আসামীরা আরেকটি বাজার বসিয়ে পরিচালনা শুরু করেছে। ঐ বাজার থেকেই আসামীরা তাদের যাবতীয় বাজার সদাইসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে। আসামীরা দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের বাজারটি বন্ধ করার জন্য আমাকেসহ বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করতো।
এমতাবস্থায় গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর সকালে নলসোন্দা নতুন বাজারে আমি আমার নিজস্ব মুদিখানা দোকানে বসে থাকাকালে উল্লেখিতসহ অজ্ঞাত আসামীরা সুপরিকল্পিতভাবে হাতে দেশীয় অস্ত্র সন্ত্র নিয়ে বাজারে এসে শক্তির মহরা প্রদর্শন করতঃ ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এবং আমাকেসহ বাজারের উপস্থিত লোকজনদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার মুদিখানা দোকান এলোপাথারীভাবে লোহার রড, কাঠের বাটাম, স্টিলের পাইপ, শাবল ও হাতুরী দিয়ে ভাংচুর করে ও অনুমান ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মালামাল (চাউলের বস্তা, ইলেকট্রিক পণ্য, প্লাস্টিকের বালতি, জগ, র্যাক, সিগারেট, পানীয় পণ্য) ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এতেও ক্ষ্যান্ত না হয়ে তারা একইভাবে উক্ত বাজারে থাকা ২৫টি দোকান এলোপাথারীভাবে ভাংচুর করে দোকানের টিনের ঝাপ, টিন, শার্টার খুলে দিয়ে ভাংচুর করতঃ টিন, ঝাপ ও শাটার নিয়ে চলে যায়।
এছাড়াও আসামীরা বাজারের বিভিন্ন দোকানপাটের মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এতে ভাংচুরসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আসামীরা।
এ ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও শতাধিক ব্যক্তির নামে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে নলসোন্দা হাট-বাজার রক্ষাসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আসামীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।