মো: তানজিম হোসাইন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
রমজান মাসে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ইফতার বিতরণ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে গত দুই যুগ ধরে চলে আসছে ব্যাপক ইফতার আয়োজন, যেখানে ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রতিদিন হাজারো রোজাদার একসঙ্গে ইফতার করেন।
গতকাল প্রথম রমজানে প্রায় দুই হাজার রোজাদার একত্রে ইফতার করেন এই মসজিদে। মসজিদের খতিব মাওলানা ছাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবেরী আল-মাদানী–এর তত্ত্বাবধানে এই আয়োজন পরিচালিত হয়। জানা গেছে, ২০০১ সালে ছোট পরিসরে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ ২০০৭ সালে বৃহৎ আকার ধারণ করে এবং বর্তমানে প্রতি রমজানে বিশাল পরিসরে ইফতার বিতরণ করা হয়।
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের প্রতিচ্ছবি
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোজাদাররা সারিবদ্ধভাবে বসে ইফতার করছেন, যেখানে ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। বড় থালায় একসঙ্গে ছয়জন বসে ইফতার গ্রহণ করেন। ইফতার সামগ্রীর তালিকায় ছিল খেজুর, ছোলা, চমুচা, পেয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, মুড়ি, অন্তন, জিলাপি ও শরবত।
ইফতারের আগে রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকুতি জানিয়ে রোজাদাররা একসঙ্গে দোয়া করেন।
সচ্ছলতা ও সংযমের মিলনস্থল
ইফতারে অংশ নেওয়া রিকশাচালক ফজল আহমেদ বলেন, “দিনভর রিকশা চালানোর কষ্ট এড়াতে আসরের পর বের হয়েছি। প্রতিবছর রমজানে এখানে ইফতার করি, যা আমার জন্য অনেক স্বস্তির।”
একইভাবে, স্বচ্ছল ব্যবসায়ী শিহাব উদ্দিন বলেন, “বাসায় ভালো ইফতারের আয়োজন থাকলেও এখানে সবাই মিলে একসঙ্গে বসে ইফতার করার আনন্দই আলাদা। নামাজের মতো ইফতারেও ধনী-গরিবের কোনো ভেদাভেদ নেই।”
সুশৃঙ্খল আয়োজন
এ আয়োজনকে নির্বিঘ্ন করতে ১২ জন বাবুর্চি পুরো রমজান মাসজুড়ে ইফতার প্রস্তুতের কাজে নিয়োজিত থাকবেন। প্রতিদিন ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক ইফতার বিতরণে সহায়তা করবেন।
ইতিহাস ও উত্তরাধিকার
১৬৬৭ সালে মোগলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ১৯৯৬ সালে খতিব হিসেবে যোগ দেন মাওলানা আনোয়ার হোসাইন। এরপর ২০০১ সালে তার উদ্যোগে ইফতার আয়োজন শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে বৃহৎ পরিসরে রূপ নেয়। এবার ২৪তম বছরে পদার্পণ করেছে এই মহতী আয়োজন।
এ আয়োজন শুধু ইফতার বিতরণ নয়, বরং ইসলামী ঐতিহ্য, সামাজিক সংহতি ও মানবিক মূল্যবোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।