আমাদের সমাজে অতিথেয়তা মানেই যেন খাবারের পদে পদে সমাদর। কারো বাসায় গেলে পাঁচ পদের আয়োজন না হলে যেন সম্মান দেখানো হয় না। আবার কেউ এলে দশ পদের আয়োজন না হলে মুখ বাঁকানোর প্রবণতাও কম নয়। অথচ এই প্রতিযোগিতামূলক সংস্কৃতি আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য ভয়াবহ চাপ তৈরি করছে।
বাস্তবতা হলো, মধ্যবিত্ত পরিবারে এক কেজি আঙ্গুরের চেয়ে এক ডজন ডিমের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। খাবারের মূল চাহিদা পূরণ না করে বিলাসী আয়োজনের প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাওয়া কি আদৌ সঠিক?
জাপানিরা কারো সাথে দেখা করতে গেলে এক কেজি চাল উপহার হিসেবে নিয়ে যায়। তাদের প্রধান খাদ্য ভাত, আমাদেরও। তাহলে আমরা চাল নিয়ে গেলে সমস্যা কোথায়? এই সহজ অথচ কার্যকর ভাবনা কেন আমাদের সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পায় না?
যদি আমরা একটি সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করি—যারা বেড়াতে যাচ্ছেন তারা সেদিনের বাজারটাই সঙ্গে নিয়ে যান। সেখান থেকেই রান্না হবে। মেহমান আর গৃহস্থী, কারোই কষ্ট হবে না। আর যদি বাসায় দুটো বাচ্চা থাকে, তাদের জন্য পাঁচ টাকার দুটি চকলেটও যথেষ্ট আনন্দের কারণ হতে পারে।
এটা বুঝতে হবে, তৃপ্তি ভরে খাওয়া যায় দুই পদেও। চাইলে সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে আরো একটি পদ যোগ হতে পারে, তাতে ভালোবাসা বা সমাদরের অভাব হয় না।
এই অপ্রয়োজনীয় সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে হবে তরুণদেরই। যারা সারা জীবন এই প্রতিযোগিতামূলক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন, তাদের পক্ষে নতুন কিছু ভাবা সত্যিই কঠিন। তাই আমাদেরই এই পরিবর্তন শুরু করতে হবে।
আসুন, অতিথেয়তার আসল অর্থকে বুঝি—খাবারের পদ নয়, বরং আন্তরিকতা।
মো: তানজিম হোসাইন
শিক্ষক ও সাংবাদিক