ঝিনাইদহ প্রতিনিধি মোঃ অমিদ হাসান
লাভজনক ফসল থেকে লোকসানের আশঙ্কা, বিপাকে চাষিরা
এক সময় ভুট্টা ছিল কৃষকের লাভজনক ফসল। বাজারে দাম ছিল ১০০০-১২০০ টাকা মণ, যা চাষিদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে সেই ভুট্টার দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৯০০-৯৫০ টাকায়। এতে বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা।
কেন কমছে ভুট্টার দাম?
কৃষকদের মতে, বাজারে আমদানি করা ভুট্টার সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকের উৎপাদিত ভুট্টার দাম কমে গেছে। এছাড়া খাদ্য ও পোলট্রি খাতে চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়ায় বাজারে দরপতন হয়েছে।
একজন চাষি আব্দুল হাকিম বলেন, “গত বছর ভুট্টার দাম ভালো ছিল, তাই বেশি জমিতে আবাদ করেছি। কিন্তু এখন বাজারে দাম কম। আমাদের খরচই উঠবে না। সরকার যদি সহায়তা না করে, তাহলে আমরা পথে বসবো।”
খরচ বাড়লেও লাভ নেই
কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। সার, বীজ, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বাড়লেও বাজারে ন্যায্য মূল্য মিলছে না। ফলে উৎপাদন খরচের তুলনায় আয় কমে যাচ্ছে।
ঝিনাইদহ কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “এই দামে ভুট্টা বিক্রি করলে আমাদের খরচই উঠবে না। একদিকে সারের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে সেচের খরচও বেশি। এখন দাম যদি না বাড়ে, তাহলে তো চাষ করাই কঠিন হয়ে যাবে।”
ভবিষ্যতে চাষ কমিয়ে দেবেন কৃষকরা?
ভুট্টার দাম কমে যাওয়ায় অনেক কৃষকই হতাশ। কেউ কেউ বলছেন, আগামীতে তারা ভুট্টার বদলে অন্য ফসল চাষের কথা ভাবছেন। মহেশপুর কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে ভুট্টা চাষ করবো না। আলু বা ধানের দিকেই মনোযোগ দিতে হবে।”
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সরকারের ভূমিকা
কৃষি বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যদি ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে কৃষকরা লাভবান হবেন। তারা বলছেন, আমদানির নিয়ন্ত্রণ, সরকারি ক্রয় এবং ন্যায্য বাজার ব্যবস্থাপনা চালু করা গেলে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে কাজ করছি। প্রয়োজন হলে সরকারি পর্যায়ে ভুট্টা কেনা হবে, যাতে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে।”
কৃষকদের দাবি ,ভুট্টার ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে কৃষকরা সরকারের কাছে কিছু দাবি তুলেছেন—
1. সরকারি উদ্যোগে ন্যায্য মূল্যে ভুট্টা ক্রয় করা।
2. আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
3. পোলট্রি ও খাদ্যশিল্পে ভুট্টার ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া।
4. কৃষি ঋণ ও ভর্তুকি বাড়ানো, যাতে কৃষকরা সহজে উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারেন।
ভুট্টা চাষিদের বর্তমান অবস্থা সত্যিই উদ্বেগজনক। একদিকে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, অন্যদিকে দাম কমেছে। এতে কৃষকের লোকসানের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদি বাজার ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উচিত দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে কৃষকরা তাদের পরিশ্রমের ন্যায্য ফল পান। দৈনিক সতর্ক বার্তা সাংবাদিক কাছে তুলে ধরেন।