প্রতিবেদক: মো. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়াবহ দুর্নীতি, রাজনৈতিক হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মিথ্যা মামলার বিস্তৃত অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষরিত একাধিক অভিযোগপত্র ও স্থানীয় নাগরিকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে ওসির বিরুদ্ধে দুঃসহ অভিজ্ঞতার চিত্র।
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের পরিবার কল্যাণ সম্পাদক জাকির হোসেন মিশু বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দায়ের করা অভিযোগপত্রে জানান, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে একটি মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয় (মামলা নং ৩৩(১০)২০২৪)। অভিযোগে বলা হয়, আমিন জুট মিলসের গেটে একটি ট্রাক থেকে মালামাল নেয়ার ঘটনার সময় তিনি চকবাজারের অফিসে অবস্থান করছিলেন, যার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। এমনকি মামলার বাদী নিজে আদালতে গিয়ে জানান, তিনি জাকিরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেননি। আদালত এই তথ্য গ্রহণ করে তাকে জামিন দেন।
জাকির হোসেনের দাবি, থানায় গিয়ে ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, “তোমার নামে আরও মামলা রেডি হচ্ছে, প্রস্তুত থাকো।” অভিযোগে আরও বলা হয়, ওসি প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অবৈধভাবে আদায় করছেন। ভীতি প্রদর্শন, মিথ্যা মামলা, বিনা কারণে আটকে রেখে টাকা নেয়া তার নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গ্রিন বেলি এলাকায় পাঁচ কাঁঠা জমিতে বিশটি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন, যার বাজার মূল্য তিন কোটি টাকার বেশি। এছাড়াও হাবিবুল্লাহ বাহার রোডে ১৭ তলা ভবনে তার একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মালিকানা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এছাড়া, ওসি আরিফের ছত্রছায়ায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তারা রয়ে গেছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এদের মধ্যে রয়েছেন—মোহাম্মদ রহিম, সেলিম উদ্দিন জয়, নাটো ইকবাল, এনাম, ইলিয়াস সরকার, মইনুদ্দিন আজমি ও নুর ইসলাম জনি। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের উপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার আসামি হয়েও মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তারা সারশিট থেকে বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, নুর ইসলাম জনির সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ রয়েছে মহি রুবেলের, যিনি পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। ওসি আরিফের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মহি রুবেলের সঙ্গে জনির সম্পর্ক ওসি’র পক্ষপাতিত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। একটি কল রেকর্ডে স্পষ্টভাবে শোনা যায়, ওসি জনিকে ধরার ভান করছেন, অথচ আড়ালে তাকে রক্ষা করছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, থানায় সাধারণ মানুষ ন্যায্য বিচার পান না, বরং অভিযোগ জানাতে গেলেই ভয়ভীতি ও হয়রানির শিকার হন। বহু আগে থেকেই ওসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুঞ্জন শোনা গেলেও সাম্প্রতিক ঘটনায় তা আরও জোরালোভাবে প্রকাশ্যে এসেছে।
দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার পক্ষ থেকে একাধিকবার মোবাইল নম্বরে কল করলেও ওসি আরিফুর রহমান কোনো উত্তর দেননি।
নাগরিক সমাজ, ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের দাবি—ওসি আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা করা হোক। প্রমাণিত হলে যেন তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একজন দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়, বরং তা রাষ্ট্রের সুশাসনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।