মোঃনাজমুল মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)প্রতিনিধিঃ
বারইখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পায়লাতলা গ্রামের আশ্রাফ আলী মোল্লার ছেলে মোঃ নাঈম মোল্লার মরদেহের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। গত ২৩ তারিখ রাতে কারা যেন মেরে ফেলে রেখে যায়। এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি।
স্থানীয়রা নাইমের এই নির্মম হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
পরিবার সুত্রে জানা গেছে মৃত নাইম খুলনা শিপইয়ার্ড এ জাহাজ নির্মান শ্রমিক এর পাইপ ফিডারে কর্মরত ছিলেন,ফেসবুকে বিভিন্ন মিডায় পরিবারের সদস্যরা জানতে পেয়ে শনিবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ শনাক্ত করেন।এবং পোস্টমর্টেম শেষে রাত ৮ টার দিকে তার গ্রামের বাড়িতে এম্বুলেন্স করে নিয়ে আসা হয়।পরে এশার নামাজ বাদ তার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করে এলাকাবাসী।
ঘটনার পর অঙ্গাত হিসেবে পুলিশ তার মরদেহটি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়,পরে ওখান থেকে ২৪ তারিখ শনিবার পোস্টমর্টেম শেষে তার মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।তার চাচাত ভাই মোঃ জাহিদ মোল্লা জানান, আমার চাচাতো ভাই নাইম মোল্লা এবং আমি একই সাথে খুলনা শিপইয়ার্ডে পাইপ ফিডারের কাজ করতাম। নাইম শিপইয়ার্ড এলাকার লেবার শেড কলোনির একটি ম্যাচে থাকতেন, গতো বৃহস্পতিবার প্রতিদিনের মতো আমরা শিপইয়ার্ডের ভিতর থেকে ডিউটি শেষ করে বিকাল ৪:৩০ এর সময় বের হয়ে, নিজ নিজ বাসায় চলে যাই।পরেরদিন শুক্রবার আমি আমার গ্রামে চলে আসি এবং রাত্র ১০ টার দিকে খুলনায় পৌছাই,শনিবার সকালে গ্রাম থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হয় নাইমকে মেরে ফেলা হয়েছে তার লাশ খুলনা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা আছে,এটি ফেসবুক সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হলে, পরে আমি সকল কাগজপত্র নিয়ে লবনচোরা থানা পুলিশকে দিয়ে, লাশ শনাক্ত করে নিয়ে আসি। তিনি আরও জানান, একসাথে শিপইয়ার্ডে ১০ বছর ধরে কাজ করছেন তারা কিন্তু কর্ম ক্ষেত্রে তার কোন শত্রুতা ছিলোনা, তবে স্থানীয় কিছু যুবকের সাথে একটি আইফোন ভাঙাকে কেন্দ্র করে একটি ঝামেলা চলতেছিলো ঐ ঘটনায় তাকে জরিমানা দিতে হয়েছে, হয়তো সে টাকা এখনও পরিশোধ হয়নি, সেই ঝামেলার সুত্রপাত ধরেও এ ঘটনা ঘটতে পারে বলেও জানান তার চাচাতো ভাই জাহিদ মোল্লা।
উল্লেখ্য,এর আগে শুক্রবার এই ঘটনা খুলনার বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজে বলা হয়,
শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে কুকুরের চিৎকারে নগরীর শিপইয়ার্ড মেইন গেটের সামনে হাজী মো. মোশারফ হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া আশরাফুল ইসলামের ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় তিনি বাইরে বেরিয়ে এসে দেখতে পান ঐ বাড়ির পেছনের পশ্চিম দিকে হাত-পা বাধা এবং মাথা ও মুখ মণ্ডল পলিথিন দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় একটি লাশ পড়ে রয়েছে। ঘটনাটি তিনি লবণচরা থানাকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
লবণচরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাকির হোসেন বলেন, নিহত যুবকের আনুমানিক বয়স ২৭ বছর। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। হাত এবং পা বেঁধে তাকে প্রথমে জখম করা হয়। পরবর্তীতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দুর্বৃত্তরা পলিথিন মুড়িয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্তে ঘটনাস্থলে পিবিআই এবং সিআইডির বিশেষ টিমকে কাজ করছেন।
খুলনার শিপইয়ার্ড এলাকা থেকে মোরেলগঞ্জের যুবক মো. নাঈম মোল্লার (২৭) হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধারকে ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘেরা শিল্পাঞ্চলের অভ্যন্তরে এমন একটি নির্মম হত্যাকাণ্ডে প্রশ্ন উঠেছে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে।
নিহত নাঈম বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী ইউনিয়নের পায়লাতলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি খুলনা শিপইয়ার্ডে ‘পাইপ ফিটার’ পদে কর্মরত ছিলেন। ২২ মে বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময়ে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে শিপইয়ার্ড মেইন গেটের পাশেই মরদেহ ফেলে রেখে যায়। পরদিন ২৩ মে শুক্রবার ভোরে স্থানীয় এক বাসিন্দা মরদেহটি দেখতে পান। খবর পেয়ে লবণচরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়, যেখানে পরিবারের সদস্যরা লাশ শনাক্ত করেন।পুলিশ জানায়, নিহতের হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল এবং মুখমণ্ডল মোড়ানো ছিল পলিথিনে। শরীরে ছিল ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন। ধারণা করা হচ্ছে, নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
নাঈমের পরিবারের দাবি, কর্মস্থলে তার কোনো শত্রুতা ছিল না। তবে কিছুদিন আগে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের সঙ্গে একটি মোবাইল ফোন ভাঙাকে কেন্দ্র করে বিরোধ হয়, এবং তাকে জরিমানাও গুণতে হয়। পরিবার আশঙ্কা করছে, পুরনো সেই বিরোধ থেকেই হয়তো এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
নাঈমের চাচাত ভাই মোঃ জাহিদ মোল্লা জানান, তার কোনো অফিস-সংক্রান্ত শত্রুতা ছিল না। তবে স্থানীয় কিছু যুবকের সঙ্গে একটি আইফোন ভাঙা নিয়ে বিবাদের কথা উঠে এসেছে। তুচ্ছ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাঈমকে অর্থদণ্ড গুণতে হয়েছিল। পরিবার সন্দেহ করছে, ওই ঘটনার জের ধরেই হয়তো এই নির্মম হত্যাকাণ্ড।
নাঈম যে কলোনিতে থাকতেন, তা সিসিটিভি ক্যামেরায় আবদ্ধ একটি সুরক্ষিত এলাকা। পরিবারের দাবি, পুলিশ যদি সেই এলাকার ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করে, তবে হত্যাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।
ঘটনার তদন্তে পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি ও পিবিআই-এর একাধিক দল কাজ করছে। তবে এখনো পর্যন্ত হত্যার মোটিভ কিংবা কারা জড়িত সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নাঈম যে কলোনিতে থাকতেন, সেটি সিসিটিভি নিয়ন্ত্রিত এলাকা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ফুটেজ প্রকাশ বা বিশ্লেষণ বিষয়ে অগ্রগতি জানানো হয়নি, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবার ও স্থানীয়রা।
নাঈমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ২৪ মে শনিবার রাতে জানাজা শেষে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এলাকাবাসী হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
নাঈমের মা হাওয়া বেগম বলেন, “আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে, আমি তাদের বিচার চাই। যেন আর কোনো মা এমন যন্ত্রণা না পায়।”
এদিকে, খুলনার শিল্পাঞ্চলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়দের দাবি, নিয়মিত টহল, সিসিটিভি কার্যকর মনিটরিং এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করলে এমন ঘটনা রোধ করা যাবে না।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে নাঈম কি কোনো তুচ্ছ বিরোধের শিকার, না কি এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?
উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে নাঈমের পরিবার, মোরেলগঞ্জবাসী এবং খুলনার সাধারণ মানুষ।